সুমন আহমেদঃ
’’বন্ধুর জন্য বন্ধু’’ হয়ে থাকবো মোরা পাশাপাশি, আমরা যে ছিয়াশি এই শ্লোগানে পালিত হয়েছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ছেংগারচর সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি ১৯৮৬-ব্যাচ শিক্ষার্থীদের বন্ধু মিলন মেলা-২০২২ বণ্যাঢ্য আয়োজনের মধ্যদিয়ে উৎসবমূখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ২৫ জুন শনিবার এসএসসি ব্যাচ-৮৬ বন্ধু মিলন মেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক এমআর আক্তার এর ঢকার উত্তরার ১১নং সেক্টরের ৪ নাম্বার রোডের ২৩ নাম্বার বাড়ির অডিটোরিয়ামে এ বন্ধু মেলার আয়োজন করা হয়।
সকাল ৯টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১০টা পর্যন্ত বিভিন্ন অনুষ্ঠান মালার মধ্যদিয়ে চলে বর্ণাঢ্য আয়োজন। দেশের কিংবা সহরের বিভিন্ন স্থান হইতে একে আসতে থাকে এসএসসি ব্যাচ-৮৬ প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
বন্ধু মিলন মেলা উদ্যাপন কমিটির আহবায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক এমআর আক্তার, সদস্য সচিব বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মোঃ দেলোয়ার হোসেন ভুইয়া, ব্যাচ-৮৬ প্রাক্তন শিক্ষার্থী কবি ও সাহিত্যিক আসিফ আলী সিরাজী বন্ধুদেরকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে ও বরণ করেন।
এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কর্মরত থাকা ও এলাকার এসএসসি ব্যাচের বন্ধুরার এসেছিলেন প্রাণের টানে। এসেছের ৮৬ ব্যাচের অনেক গুনী ব্যক্তিবর্গরা। বন্ধুদের কাছে পেয়ে যেন ক্ষনিকের জন্য সকলে মিলে ফিরে গেলেন তারুন্যের সেই দিনগুলোতে।
দীর্ঘ ৩৬ বছর পর প্রিয় বন্ধুদেরকে কাছে পেয়ে এক আনন্দঘন পরিবেশের তৈরি হয়। অনেকে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। এ যেন পুরনো স্কুলের স্মৃতিতে ফিরে যাওয়ার আনন্দ। তাদের সবার চোখে-মুখে ছিলো খুশির হাসির ঝিলিক। খোঁজ-খবর নেন পরিবার-পরিজনের। অনেকের চেহারা চেনা চেনা লাগলেও পরিচয় জেনেই নিশ্চিত হই তিনিই সেই স্কুল বন্ধু। এভাবে ঢাকার উত্তরা এমআর আক্তারের অডেটোরিয়াম স্পট যেন এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। যেখানে এই সাবেক শিক্ষার্থীরা শৈশবের উৎসবে মেতে ওঠেন।স্কুল-কলেজ জীবনের হারিয়ে যাওয়া বাঁধভাঙা বন্ধুত্বের এক একটা পরিচ্ছেদকে আরেকবার ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ মেলে এই আয়োজনে।
এই দীর্ঘ ৩৬ বছরে এসএসসি-৮৬ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিভিন্নজন নানা পেশায় চলে গেছেন। এদের মধ্যে অনেকে ডাক্তার, প্রকৌশলী, আইনজীবী, ব্যাংকার, সাংবাদিক, সরকারি কর্মকর্তা, বড় রাজনীতিবিদ, সামরিক ও বেসামরিক অফিসার, কেউবা আবার শিক্ষক কিংবা ব্যবসায়ী। কেউ বা আবার প্রবাসী। কিন্তু পরিচয় সবার যেন একটা সেটা হলো আমরা স্কুল বন্ধু। সুদুর ইতালী থেকেও অনুষ্ঠানে ভিডিও কলে যুক্ত হয়েছেন আঃ হান্নান খানসহ আরো প্রবাসী অনেকে।
অনুষ্ঠানে শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলোয়াত ও জাতীয় সঙ্গিত মধ্যদিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সুচনা করা হয়। এরপর বন্ধু মিলন মেলার স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা শুরু হয়।
স্মৃতিচারণের শুরুতেই বিদ্যালয়ের প্রয়াত শিক্ষক ও এসএসসি ব্যাচ-৮৬ প্রয়াত শিক্ষার্থীদের সম্মানে এক মিনিট নিবরবতা পালন করা হয়। শেষে বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় মোনাজাত ও দোয়া করা হয়। দুপুরের লাঞ্চ, নাচ, গান, পুরষ্কার বিতরনী, মনোজ্ঞ সাংস্কুতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সব শেষে ছিল র্যাফেল ড্র।
প্রাক্তন শিক্ষার্থী ইমামপুর পল্লীমঙ্গল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজদের সঞ্চালনায় স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভায় ৮৬ ব্যাচ বন্ধুদের আগামী দিনের পরিকল্পনা ও পরিক্রমার বিশদ আলোচনা করেন অনুষ্ঠানে সভাপতি বন্ধু মিলন মেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক এমআর আক্তার।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন,উদযাপন কামিটির সদস্য সচিব বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মোঃ দেলোয়ার হোসেন ভুইয়া, ও কবি ও সাহিত্যিক আসিফ আলী সিরাজী।
এতে আরো বক্তব্য রাখেন, বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মোল্লা মোঃ বোরহান উদ্দিন, মোঃ মোখলেছুর রহমান, প্রাক্তন শিক্ষক অলিউল্লাহ চৌধুরী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী এসএম জাহাঙ্গীর আলম প্রধান, এনায়েত উল্লাহ, ছেংগারচর পৌরসভার সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আলহাজ্ব রুহুল আমিন মোল্লা,ব্যাচ-৮৬ প্রাক্তন শিক্ষার্থী মোঃ রফিকুল ইসলাম রিপন, ডা.এসএমস আলী আহম্মদ, ডা.খবির উদ্দিন পাটোওয়ারী, বেনজির অঅহম্মেদ মুন্সী, আশ্রাফ উদ্দিন ঢালী, কামাল উদ্দিন সরকার, কবি ইমাম হোসেন শিকদার, মোঃ ফারুক হোসেন, খোরশেদ আলম আজাদ, শামসুন্নাহার বেবী, শাহানা আক্তার সিলু, জামাল উদ্দিন বাচ্চু, মোঃ সোয়েব আহম্মেদ সরকার, নাছিমা হোসেন, মাকসুদা চৌধুরী, মাহফুজা মনি রিতা, আবুল কালাম সরকার প্রমূখ।
আলোচনা সভায় বন্ধু মিলন মেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক এমআর আক্তার তার অনুভৃতি প্রকাশ করে বলেন, আমরা ৩৬ বছর আগে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার পর এতদিন বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিলাম। এই অনুষ্ঠানে সব বন্ধুকে এক সঙ্গে পেয়ে আমি আবেগাপ্লুত এবং ভীষণ আনন্দিত।
দীর্ঘ দিনপর স্কুলের বন্ধুদেরকে কাছে পেয়েছি। অনেক দিন ধরে আমাদের ৮৬ ব্যাচ বন্ধুদের মধ্যে যোগাযোগ,কথাবার্তা, দেখা ছিলনা, আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আবার বন্ধুদেরকে কাছে পাওয়ার সুযোগ হলো। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা একে অপরকে কাছাকাছি আসতে পেরেছি। আজকে খুবই আনন্দ লাগছে। আমরা আনন্দে উল্লেসিত উচ্ছসিত। আজকে মনে হলো এখনও আমরা ছাই আছি। আশা করি এটি আমাদের মধ্যে বন্ধুত্বের বন্ধনকে আরো সুদৃঢ় করতে সহযোগিতা করবে। এই জন্যই আমাদের আজকের এই মিলন মেলার আয়োজন। আমরা আমাদের বন্ধন অটুট রাখতে চাই। এমআর আক্তার আরও বলেন,ভবিষ্যতে সব বন্ধু মিলে আমাদের ৮৬ বন্ধুসংগঠনকে সাংগঠনিক রূপের মাধ্যমে সকল বন্ধুদের একত্রিত করে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে বন্ধুদের সহায়তা, মেধাবী সন্তানদের পড়াশোনায় সহায়তা, বন্ধুদের যেকোনো বিপদে ও আনন্দে পাশে থাকা ও রাষ্টীয় কোন দূর্যোগে মানবিক কর্মকাণ্ডে মানুষের পাশে থাকবো। এই ৮৬ ব্যাচ বন্ধনকে আমরা সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এই বন্ধনে অঙ্গিকারাবদ্ধ। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা বন্ধুরা যাতে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারি এটাই প্রত্যাশা।”
উদ্যাপন কমিটির সদস্য সচিব বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজ সেবক মোঃ দেলোয়ার হোসেন ভুইয়া তার অনুভৃতি প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ দিন পরে অনেকের চেহারায়,কথাবার্তায় অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। আজকের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুযোগ হলো পুরনো বন্ধুদের দেখার। এবং দীর্ঘদিন পরে একে অপরের কাছাকাছি কথা বল্লাম,মতবিনিময় করলাম। অনেক দিন পরে খেলার সার্থী,পড়ার সাথী বন্ধুদেরকে কাছে পেয়েছি। একত্রিত হয়েছি।এজন্য খুবই ভালো লাগছে। আমার বন্ধু আক্তার, আমি ও বন্ধু আসিফ সিরাজীসহ ৮৬ ব্যাচ বন্ধুরা মিলে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পেরে নিজেকে খুবই সুখি মনে হচ্ছে। নিজেকে খুজে পেয়েছি সেই দিনের কথা। আমরা ছেংগারচর উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ছি।
আলোচনা সভা শেষে সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্ব র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। শেষে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বণাঢ্য আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।