কামরুজ্জামান হারুন :
মাইজভাণ্ডারী সূফিবাদি দর্শনের বিকাশ ও পূর্ণতাদানকারী গাউছুল আ’যম হযরত শাহ্সূফী মাওলানা সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভাণ্ডারী (ক.)’র ২দিন ব্যাপী ১৬০ তম খোশরোজ শরীফ আনজুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভাণ্ডারীয়াসহ বিভিন্ন সংগঠনের উদ্যোগে দেশ বিদেশ থেকে আগত লাখো ভক্ত-জনতার অংশগ্রহণে পালিত হয়েছে। দেশবাসীর ওপর আল্লাহর রহমত ও নিপীড়িত মানবতার মুক্তি কামনায় আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করেন দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন শাহ্সূফী সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী।
১৪ অক্টোবর শুক্রবার খোশরোজ শরীফের প্রধান ও সমাপনী দিবসে জুমা’র নামাজে লাখো মুসল্লি অংশগ্রহণ করে। মাইজভাণ্ডার রহমানিয়া মইনীয়া দরসে নেজামী মাদ্রাসা ও হেফজখানা মাঠে জুমা’র নামাজে ইমামতি করেন মাইজভাণ্ডার দরবার শরীফের সাজ্জাদানশীন, আনজুমান কেন্দ্রীয় সভাপতি হযরত শাহ্সূফী মাওলানা সাইয়্যিদ সাইফুদ্দীন আহমদ আল্-হাসানী।
গাউছুল আ’যম হযরত বাবাভাণ্ডারীর (ক.) খোশরোজ শরীফ উপলক্ষে রহমাতুল্লিল আ’লামিন কনফারেন্সে সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, মহানবীর (দ.) এ ধরায় মানব আকৃতিতে শুভাগমন জগৎবাসীর জন্য আল্লাহ পাকের বিশেষ রহমতস্বরূপ। আল্লাহপাক নিজেই বলেছেন, হে রাসূল আমি আপনাকে জগৎবাসীর জন্য রহমত স্বরূপ পাঠিয়েছি। মহানবীর (দ.) বাহ্যিক অবয়ব মানুষের আকৃতিতে হলেও তাঁর আসল সত্তা হলো নূর। মানুষকে পথ দেখানোর জন্যই আল্লাহ পাক তাঁকে মানব আকৃতিতে পাঠিয়ে বিশ্ববাসীকে ধন্য করেছেন।
হুজুর কেবলা বলেন, এই পৃথিবীতে শানে রেসালত ও শানে বেলায়তের প্রচার প্রসারে আউলিয়ায়ে কেরামরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। আউলিয়ায়ে কেরাম তথা সুফি সাধকরা কখনো মানুষে-মানুষে কোনো প্রভেদ-বিভাজনকে প্রশ্রয় দেন না। তেমনি গাউছুল আ’যম হযরত সৈয়দ গোলামুর রহমান বাবাভাণ্ডারী (ক.) মানুষে-মানুষে ঐক্য-সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ার দিক নির্দেশনাই দিয়ে গেছেন। তিনি আরো বলেন, ইসলামের স্বর্ণযুগে ‘সুফিবাদ’ ছিল মুসলমানদের রাজনৈতিক শক্তির অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজ মুসলমানদের মাঝে অনৈক্য, বিদ্বেষ, দ্বন্দ্ব-সংঘাত, ক্ষমতার লোভ জেঁকে বসেছে। রাষ্ট্রে দুর্নীতি, অন্যায়-অবিচার, বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে এবং জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নৈতিক অবক্ষয়ের আঘাতে জাতির মূল চালিকাশক্তি যুব সমাজ বিপর্যস্ত, পথহারা। তাদের উচ্চশিক্ষা অর্জনও বিফলে পর্যবসিত হচ্ছে। তাদেরকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে তাসাউফ চর্চার বিকল্প নেই। তিনি বলেন, শিক্ষা ব্যবস্থায় তাসাউফকে গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে সুফিবাদি চেতনাকে উজ্জীবিত করতে হবে। কারণ তাসাউফের অনুসরণ মানুষের বিবেকবোধ তথা মূল্যবোধকে জাগ্রত করে।
খোশরোজ শরিফের কর্মসূচিতে ছিল খতমে কুরআন, খতমে গাউছিয়া, রওজায় গিলাফ চড়ানো, জিয়ারত, ফ্রী চিকিৎসা ক্যাম্প, হুজুর কেবলার জীবনী আলোচনা, ওয়াজ-মিলাদ, ছেমা, কাওয়ালী ও রাতে তবারক বিতরণ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মরক্কোর ওয়াজদা কমিশন ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. শায়খ মোঃ লাকদার দারফুফি বলেন, পৃথিবী ব্যাপি যুদ্ধ-সংঘাতের কারণে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। পৃথিবীর কোথাও শান্তির লেশ মাত্র নেই। বাস্তুচ্যুত, আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসার অভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছে। অথচ একদিন এদের সবই ছিল। আজ তাদেরকে মানবেতর জীবন যাপনে বাধ্য করা হচ্ছে। যুদ্ধ কোনো কালে কখনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারেনি। নিরীহ নিরপরাধ মানুষ যুদ্ধ চায় না। কোনো সমস্যার সৃষ্টি হলে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা বাঞ্ছনীয়। আমরা প্রিয়নবীর (দ.) জীবনাদর্শ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারি। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা কিভাবে সম্ভব তিনি মদীনার সনদের আলোকে আমাদেরকে দেখিয়ে দিয়েছেন। মানবতার বিপর্যয় রোধ ও বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে মদিনার সনদের বিকল্প নেই।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তুরস্কের দারুল ইসলাম কলেজের ডীন ড. শায়খ সৈয়দ মোহাম্মদ ই.এল হোসাইনী, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সূফীজমের উপদেষ্টা, ড. শায়খ আহমদ তিজানি বিন ওমর, ভারতের ইসলামিক স্কলার শায়খ মোঃ সাখাওয়াত হোসাইন বারাকাতী, শাহ্জাদা সাইয়্যিদ মেহবুব-এ-মইনুদ্দীন আল্-হাসানী, শাহ্জাদা সাইয়্যিদ মাশুক-এ-মইনুদ্দীন আল্-হাসানী।
অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন মাওলানা রুহুল আমিন ভূঁইয়া চাঁদপুরী, হযরত মাওলানা বাকের আনসারী, শায়খ আজমাইন আসরার, মুফতি মাকসুদুর রহমান, মাওলানা ইসমাইল হোসেন সিরাজী, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির দপ্তর সম্পাদক মো: ইব্রাহিম মিয়া প্রমুখ।