মোঃ সাজ্জাদ হোসেন রনিঃ
বিচিত্র বাংলাদেশে ছয়টি ঋতু থাকলেও মানুষ তিনটি ঋতু গভীরভাবে উপভোগ করে। তা হলো- গ্রীষ্ম, বর্ষা আর শীত। গ্রীষ্মে প্রচুর গরম পড়ে, সেই গরমে পাকে আম-কাঠালসহ নানা রকম ফল। বর্ষায় হয় মুষলধারে বৃষ্টি, পথ ঘাট তলিয়ে যায় পানিতে। নদী-নালা, খাল-বিল, পানিতে থইথই করে। শীতে কনকনে ঠান্ডায় গরম পোষাক পড়তে হয়।
কিন্তু এবারের বর্ষা ঋতু সম্পূর্ণ বিপরীত। আষাঢ় মাস শেষ হয়ে শ্রাবণ চলে আসলেও নেই বৃষ্টি। প্রখর তাপে অতিষ্ঠ হাইমচরের জনজীবন, বাড়ছে রোগবালাই। হাসপাতালে রোগীদের উপচে পড়া ভীড়।
যে মাসে তুমুল বৃষ্টি হওয়ার কথা সেই আষাঢ়-শ্রাবণে এখন প্রকৃতিতে বিরাজ করছে বৈরী আবহাওয়া। সূর্যের প্রখর তাপে এবং ভ্যাপসা গরমে মানুষ ও পশুপাখি হাঁসফাঁস করছে। মাঝেমধ্যে হালকা বৃষ্টির দেখা মিললেও বৃষ্টি শেষে আবার ভ্যাপসা গরম।
বর্ষাকালেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রামবাসীকে গ্রীষ্মের দাপদাহে পুড়তে হচ্ছে। আর গরম বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষ বিভিন্ন রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষ করে পানিশূন্যতা, হিটস্ট্রোক, ডায়রিয়া, পানিবাহিত বিভিন্ন রোগ ও ভাইরাস জ্বরে আক্রান্তের পরিমাণ বেশি।
হাইমচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকরা জানান, গরমে প্রচুর ঘাম হওয়ায় শরীরের পানি বের হয়ে যাচ্ছে। এতে পানিশূন্যতায় অনেকে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। কারও কারও রক্তচাপ কমে যাচ্ছে। এজন্য চিকিৎসকরা প্রচুর পানি ও পানিজাতীয় খাবার খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
কখনও ঘরে, কখনও বাহিরে। ঠান্ডা গরমে মিশে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তিরা। ফলে অনেকের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে আসছে। আর এ সুযোগে শরীর বিভিন্ন ধরনের ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য এই সময়ে ভাইরাস জ্বরের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। জ্বরাক্রান্ত গায়ে প্রচণ্ড ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট অনুভব করছেন রোগীরা।
কাজের জন্য যাদের নিয়মিত ঘরের বাইরে হাট-বাজারে যেতে হচ্ছে তাদের হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। হিটস্ট্রোকে সাধারণ একজন রোগীর শরীরে ব্যথা হয়, পিপাসা লাগে, শ্বাসকষ্ট হয়, মাথা ব্যথা করে, চেতনা লোপ পায়। একপর্যায়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়। এ অবস্থায় দ্রুত রোগীকে হাসপাতালে নিতে না পারলে রোগী মারাও যেতে পারে।
এ ছাড়া গরমে পিপাসা মেটাতে অনেকে বাইরে থেকে পানি, আখের জুসসহ শরবত কিনে খাচ্ছেন। এগুলো পানিবাহিত রোগের অন্যতম উৎস। এ থেকে টাইফয়েড, আমাশয়, ডায়রিয়া, হেপাটাইটিসের মতো পানিবাহিত রোগ বেশি দেখা যায়। এজন্য এই সময়ে বাইরের পানি ও শরবত-জাতীয় পানি পান না করার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
বর্ষা মৌসুমের পুরো একটি মাস পেরিয়ে গেলেও বৃষ্টির যেমন দেখা নেই তেমনি প্রচন্ড গরমে নাভিশ্বাস উঠছে জনজীবনে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন কৃষকগন।
হাইমচর উপজেলার পূর্ব চরভাঙ্গা গ্রামের কৃষক ছানা উল্লাহ গাজী বলেন, বোরো চাষে তার ব্যাপক লোকসান হয়েছে। সেই লোকসানের বোঝা মাথায় নিয়ে জ্যৈষ্ঠের শেষে আমন চাষের জন্য বীজতলা তৈরি করেন তিনি। সময় হয়েছে চারা রোপণের।
কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় ধানের চারা রোপণের জন্য ক্ষেত প্রস্তুত করতে পারছেন না। শ্রমিক দিয়ে সব কাজ করাতে হয়, ৩-৪ বিঘা জমিতে সেচ দিয়ে আমন চাষ করতে হলে লোকসানই হবে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রাকিবুল হাসান শরীফ বলেন, এখনো পর্যন্ত দু’সপ্তাহ সময় রয়েছে আমন ধান রোপণের জন্য। অগ্রিম চাষাবাদে আগ্রহী কৃষকরা ইতিমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সেচের মাধ্যমে ধান রোপণ করছেন।
তবে, এখনো বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দু’সপ্তাহের মধ্যে কাঙ্খিত বৃষ্টিপাত না হলে সেক্ষেত্রে আমন চাষে সেচের জন্য কৃষকের বাড়তি অর্থ খরচ করতে হতে পারে। আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে তিনি বলেন, এটি মূলত বিগত বছরের অর্জিত লক্ষ্যমাত্রার উপর ভিত্তি করে নির্ধারিত হয়।