• বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:৩৩ অপরাহ্ন
Headline
মতলব উত্তরে তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম উদ্বোধন  সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী কাজে অংশ নিলে ক্যারিয়ারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখেঃ ইউএনও মাহমুদা কুলসুম মনি দুগ্ধ খামারীদের নিয়ে ৩ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত ছেংগারচর বাজার বণিক সমিতির নির্বাচনে সভাপতি পদে মান্নান লস্করের মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ মতলবে  ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার  শ্রীনগরে উৎসব মুখর পরিবেশে বোরো ধানের রোপণের কাজ চলছে মাদক. যৌতুক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুবকদের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে– সৈয়দ সাইফুদ্দীন আহমদ  মতলব উত্তরে তারুণ্যের উৎসব ফুটবল টুর্নামেন্টের উদ্বোধন  মতলবে সাবেক স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যা।।  সাবেক স্বামী আটক তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানালেন ডোনাল্ড ট্রাম্প

একটি বাড়ী নিয়ে একটি ওয়ার্ডঃ সবাই সনাতন ধর্মের

মতলবের মেহরন দালাল বাড়ি বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাড়ী

Lovelu / ৫০৪ Time View
Update : শনিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২২

মাহবুব আলম লাভলুঃ

চাঁদপুর জেলার মতলব দক্ষিণ উপজেলার নায়েরগাঁও দক্ষিণ ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের মেহরন দালাল বাড়ি নামে সবার কাছে পরিচিত। পুরো বাড়িটি নিয়ে একটি গ্রাম। ইউনিয়নের একটি ওয়ার্ড। গ্রামটির দৈর্ঘ্য প্রায় ২ কিলোমিটার ও প্রস্থ আধা কিলোমিটার। এ গ্রামে প্রায় ৭ হাজার লোকের বসবাস। ভোটার সংখ্যা ৩ হাজার। সবাই সনাতন ধর্মের অনুসারী।বাসিন্দারা পেশায় জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী। বিয়ে-শাদি বেশির ভাগই হয় নিজেদের মধ্যে। এ বাড়িতে প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থীদের আগমন ঘটে।মেহরন দালাল বাড়ি বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বড় বাড়ি বলে বাসিন্দারা মনে করেন।

মেহেরন দালাল বাড়ীর নামকরণ কিভাবে হয়েছে তা জানে না সেখানকার ষাটোর্ধ্ব বাসিন্দারা। তবে জগন্নাথ মন্দিরের পূজারী বয়োঃবৃদ্ধ সচিন্দ্র চক্রবর্তী জানান, ‘মেহেরন মূলতঃ মহারণ ছিল। মহা অর্থ বড় আর রণ অর্থ যুদ্ধ। অর্থাৎ বড় যুদ্ধ। কোন এক সময়ে এখানে জাগতিক বড়যুদ্ধ হয়। তখন এর নাম হয় মহারণ। পরে আস্তে আস্তে লোকজন মহারণকে মেহেরন নামে ডাকতে শুরু করে। এখানে জমিদাররা বসবাস করতো। এ এলাকায় কেউ জুতা পায়ে দিয়ে হাটতো না।

নামকরণ সম্পর্কে জমিদারদের বংশধর সমীর দাস বলেন দেড়’শ বছর আগে কালাচান দাস, গিরিশ চন্দ্র দাস ও তার আত্মীয়-স্বজন পশ্চিম বঙ্গ থেকে এখানে আসেন। এখানে তারা দীর্ঘদিন ব্যবসা বাণিজ্য করেন। এখন তাদের কেউ নেই। কেউ ভারতে চলে গেছেন, আবার কেউ অন্যত্র চলে গেছেন। এ বাড়িতে জেলেরা স্থায়ীভাবে বসবাস করছে জমিদারদের বৃটিশরা উপাধি দেয় দালাল বলে। এ জন্য এ বাড়ির নাম মেহরন দালাল বাড়ি। জমিদারদের দো’তলা দুটি ভবন এখনও কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে।

এ বাড়ীতে রয়েছে প্রায় ১’শ ১টি নলকূপ, ৮টি মন্দির, কাপড়ের দোকান, স্বর্ণের দোকান, কয়েক’টি সেলুন, ফার্নিচারের দোকান, কয়েকটি মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়ের দোকান। এসব দোকানগুলো তাদের ঘরেরই একটি অংশ।

বাড়িটি নারায়নপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাত্র আড়াই কিলোমিটার দূরে এ অবহেলিত গ্রামটি অবস্থিত। ওই বাড়িতে যাওয়ার জন্য পূর্বে নৌকা ছিলো একমাত্র বাহন। এখন নায়েরগাঁও বাজার থেকে পায়ে হেঁটে, রিকশা কিংবা অটো বাইকেও যাওয়া যায়। বাড়িতে প্রবেশের জন্য পূর্ব ও উত্তর দিক দিয়ে দু’টি মাটির রাস্তা রয়েছে।

স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেটের রয়েছে চরম অভাব। এ গ্রামে রয়েছে ১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। প্রায় ৮’শ শিশু চারভাগের একভাগও স্কুলে যায় না।ছেলেমেয়েদের মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়ার জন্য কয়েক মাইল হেঁটে যেতে হয় নারায়নপুর পপুলার উচ্চ বিদ্যালয়ে।

সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নরেন্দ্র দাস জানান, বাড়ির ঘরগুলো গিজ গিজ করে। উঠান বারান্দা কিংবা বাগানবাড়ি বলতে কিছু নেই। কোথাও এক ঘরের মূল দরজার সামনেই আরেক ঘরের বেড়া। সব মিলিয়ে এমন অবস্থা হয়েছে যে, সূর্যের দিকে না তাকালে দিক নির্ণয় করা বড় মুশকিল। অধিকাংশ ঘর টিনের। রাস্তা গুলো সরু। বৃষ্টি হলে দূর্ভোগে মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। তবে বাড়ির সরু রাস্তা গুলো সরাকারি অনুদানে পাকাকরণ হয়েছে। বাড়ির ভেতরে নতুন কেউ ঢুকে আরেকজন পথ দেখিয়ে দেয়া ছাড়া তিনি বের হতে পারবেন না।

এ বাড়ির বাসিন্দা জয় গোপাল দাস জানান, অধিবাসীদের অধিকাংশরই পেশা মাছ ধরা। বাড়িতে একটি পরিবার শুধু শীল বংশের। বাকিরা দাস বংশের। বিয়ে-শাদি বেশির ভাগই হয় নিজেদের মধ্যে। বিনোদনের জন্য রয়েছে টেলিভিশন ও ডিস সংযোগ।

সাবেক ইউপি মেম্বার উত্তম দাস জানান, এ বাড়ীর অধিবাসীদের স্বচ্ছলতা ও শিক্ষাদিক্ষা না থাকলেও নির্বাচনে তাদের বাড়িতে কদর থাকে। তাদের ভোট ছাড়া কারও পক্ষে চেয়ারম্যান হওয়া সম্ভব হয় না। নিজেদের ভোটে বাড়ি থেকে মেম্বার পাস করিয়ে নেয় তারা। ভোটের সময় সবাই তাদের কাছে ধর্না দেয়। ভোট চলে গেলে কেউ তাদের খোঁজ নেয় না। এ বাড়ির লোকদের বেশির ভাগ সমস্যায় পড়তে হয় গর্ভবীত মা রোগীদের চিকিৎসার জন্য। কমিউনিটি ক্লিনিক কিংবা কোন ধরনের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র নেই এ বাড়িতে।

বিরেন্দ্র মাস্টার, অতিন্দ্র সাদু ও স্বর্ণ কুমার দাস তাদের বাড়ির বসবাসকারী ছেলে- মেয়েদের জন্য একটি উচ্চ বিদ্যালয়, স্বাস্থ্য সেবার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক ও একমাত্র সড়কটি পাকা করণের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তাহলেই অবহেলিত ও বিরল এ বাড়ির মানুষ নাগরিক সুবিধার আওতায় আসবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category