রাজিয়া রহমান
ভাবছিলাম মিডিয়া পার্সনদের ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে কিছু বলব না, কিন্তু না লিখে পারলাম না বিষয়টা জাতি ও নারীসমাজের জন্য এতটাই বিরূপ প্রভাব ফেলেছে, যার কারণে আমরা লজ্জিত ও বিব্রত।
বিয়ে সন্তান হচ্ছে পবিত্র বিষয়। এগুলো লুকিয়ে রাখার বিষয় নয়। শুধুমাত্র মনের মধ্যে দুরভিসন্ধিমূলক কোন ব্যাপার থাকলেই মানুষ এ ধরনের কাজ করতে পারে, তাও বার বার করাটা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। বর্তমান বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের এই যুগে নারীরা যদি স্বাধীনভাবে চলতে না পারে, স্বাধীনভাবে সম্মানের সাথে তারা তাদের পেশাগত কাজ করতে না পারে পুরুষ সঙ্গী বা আর্টিস্টের ইচ্ছে অনিচ্ছের উপর তাদের জীবনের সবকিছু নির্ভর করে এমনকি বিয়ে ও সন্তান জন্মদানের বিষয়টিও তাদের ইচ্ছে অনুসারে লুকিয়ে রাখতে হয় তাহলে তাদের মত দুর্ভাগা মনে হয় আর কোন পেশার কেউ নেই। আমি একজন সাধারণ ও সচেতন নারী হিসেবে কখনোই এই বিষয়টিকে সমর্থন করি না। কি লাভ এই যশ আর তারকাখ্যাতি দিয়ে যদি আপনার সম্মানই না থাকে, আপনার এত বড় সুসংবাদ মা হওয়ার সংবাদ যদি আপনি আপনার স্বামীসহ পৃথিবীকে নাই দিতে পারেন এর চেয়ে যন্ত্রণা বা কষ্টের আর কি হতে পারে! আপনিতো তাহলে চরম দুর্ভাগা। সাংস্কৃতিক জগতের তারকাদের অনেক মুখরোচক খবর মিডিয়াতে আসে, আমি কখনো মাথা ঘামাই না তাদের ব্যক্তিগত বিষয় ভেবে কখনো এসব বিষয় নিয়ে লেখার চেষ্টাও করি না।
কিন্তু শাকিব খান নাকি বাংলার কিং খান, গ্রামে গঞ্জে শহরে তার অনেক ভক্ত ছড়িয়ে আছে, ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি বেশ শক্ত অবস্থান গড়েছেন। নিঃসন্দেহে দীর্ঘ সময় ক্যারিয়ারে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য অনেক কাজ করেছেন। অনেকের নিকট তিনি এই সময়ে সুপার স্টার হিসেবে পরিচিত। তাই যদি হয় তাহলে তাঁর এইরকম কর্মকাণ্ড ফিল্ম ইণ্ডাষ্ট্রিকে প্রশ্নের সম্মুখীন করছে, বিতর্কিত করছে, সংস্কৃতি কর্মী ও মিডিয়ার লোকদের লজ্জা ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিচ্ছে। পরবর্তী প্রজন্মের জন্য তিনি একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে রইবেন, তাকে তার অনুজ অনেকে হয়ত অনুসরণ করবে। এই ধরনের কাজে উদ্বুদ্ধ হতে পারে। সাধারণ মানুষের নিকটও তাঁরা আইকন, স্টার আইকন। ভারতের অমিতাভ বচ্চন, উত্তম কুমার, বাংলাদেশের নায়করাজ রাজ্জাক, ববিতা, শাবানা, মান্না এমনকি জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ, সানি মৌসুমি,রিয়াজ ফেরদৌসেরও পরিচ্ছন্ন ক্যারিয়ারে একটি বিয়েই করেছেন, তারা বিয়ে ও সন্তানের বিষয়ে কখনো গোপন করেননি। কই তাদের জনপ্রিয়তা বা সম্মান কোন অংশেতো কমে যায়নি বরং বেড়েছে।
সাকিব এই কাজটি ভুল করে একবার করলেও মেনে নেয়া যেত। এই পর্যন্ত প্রাপ্ত নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র হতে জানতে পেরেছি তৃতীয়বারের মত এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। রাত্রি,অপু, বুবলি প্রত্যেকের ঘরে তার একটি করে ছেলে সন্তান রয়েছে। এখন চতুর্থ শিকারী হতে যাচ্ছেন সেদিনের বাচ্চা মেয়ে বর্তমানে টিনএজ তারকা পূজা চেরি। বাচ্চা একটি মেয়ে, ক্যারিয়ার মাত্র শুরু, এই মেয়েটি জীবন সম্পর্কে কতটুকুই বা বোঝে বা অভিজ্ঞতা ই বা কতটুকু, এই মেয়েটিকে ফাঁদে ফেলে পটিয়ে ফেলা কোন ব্যাপারই না। এই কচি মেয়েটির পরিণতিও যদি তার পূর্বসূরীদের মত হয় তাহলে খুবই দুঃখজনক। ইতোমধ্যে শুনেছি পূজাকে নিয়ে শাকিব খান আমেরিকায় চলে যাচ্ছেন। এবার এসে তিনি বিয়ের ঘোষণা দিয়েছিলেন, তিনি দর্শকদের বা সাধারণ মানুষদের খুব বোকা মনে করেন তাই ভেবেছেন গোপন সম্পর্ক আর বিয়ের কথা জনগণ জানে না বা বোঝে না। চিত্রনায়িকা রাত্রি সম্পর্কে আমার খুব বেশি জানা নেই তাই তার সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে চাই না, তার ঘরে যে সন্তান তাদের সম্পর্কটি সাকিব খানের নায়ক হওয়ার উঠতি সময়ে। রাত্রিও অতটা হাইলাইট হয়নি বলে খুব সহজেই ঝেরে ফেলেছেন কিং খান। তারপর অপু বিশ্বাসের সাথে দীর্ঘ সময় জুটি বেঁধে কাজ করেছেন, বিয়েও করেছেন গোপনে, সংসারও করেছেন আট বছর, বেশ কয়েকবার তাদের সন্তান ও নষ্ট করেছেন সাকিব। শেষবার ডাক্তার অপুকে যখন বলেছেন এইবার নষ্ট করলে তিনি আর মা হতে পারবেন না, তখন অপু সেই সন্তানকে আর মারতে চাননি, কিন্তু সাকিব কিছুতেই বাচ্চা আসতে দিবে না, অপু শতভাগ বাচ্চা রাখার ব্যাপারে এডামেন্ট ছিলেন।
সাকিব তখন তাকে লোকচক্ষুর আড়ালে কলকাতায় পাঠিয়ে দিলেন, যাতে কেউ না জানে। অপু একা একাই সেখানে বাচ্চা জন্ম দিলেন, সাকিব একটিবারের জন্যও সেখানে যায়নি। এর মধ্যে সাকিব খান নতুন নায়িকা নিয়ে নতুন নতুন ছবি করছেন এবং নতুন নায়িকা বুবলির সাথে প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। অপু যখন বাচ্চা নিয়ে ফিরে এলেন তখন সাকিব চেইঞ্জ হয়ে গিয়েছেন। বুবলি সাকিবের সাথে ফ্যামিলি টাইম ক্যাপশন দেখে সবকিছু জানার পর অপু একটি টেলিভিশন চ্যানেলের লাইভে পুত্রসহ এসে তিনি সব প্রকাশ করলেন। তারপর সাকিব খান মিডিয়া ও পারিপার্শ্বিক চাপে প্রথমে মেনে নিলেও পরে অপুকে ডিভোর্স দেন। অনেকদিন শুনেছি বাচ্চার খরচপাতিও দেননি। শুরু থেকেই মিডিয়া থেকে শুরু করে সাধারণ জনগণ অপুর পক্ষেই ছিল।
বুবলি সবকিছু জানার পরও তিনি সাকিব খানের সাথে আরও গভীর সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এবং দেশ বিদেশে তাদের সিনেমার শুটিং চলতে থাকে, তারা বেশ হেপি জুটি হিসেবে মিডিয়ার সামনে নিজেদের উপস্থাপন করতে থাকেন।
এইদিকে অপু বিশ্বাস একা একাই ছেলেকে নিয়ে সংগ্রাম করে চলেছেন। তাঁর প্রতি সম্মান ও সহানুভূতি মিডিয়া থেকে শুরু করে সকল মানুষের ছিল। সবাই তাঁর পক্ষ নিয়ে সাকিব খানের কড়া সমালোচনা করেছেন।
আজ যখন শোনা যাচ্ছে বুবলির সন্তানকেও প্রকাশ্যে আনেননি সাকিব খান, বয়স আড়াই বছর, অথচ বিয়ে সন্তান কোনটাই প্রকাশ করেননি এবং তাদের নাকি অলরেডি বিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। সাকিব ইতিমধ্যে নাকি কচি বয়সের টিনএজ নায়িকা পূজার সাথে গভীর প্রেমে মগ্ন। বুবলি হাতে নাতে নাকি ধরেছেন দুজনকে সাকিবের বাসায়। বিশ্বস্ত সূত্রে খবর সাকিব নাকি গোপনে পূজাকে বিয়েও করেছেন।
এখন বুবলির জন্য করুনা মায়া কোনটাই হচ্ছে না। যেভাবে অপুর জন্য সবাই কেঁদেছিল, বুবলির জন্য সেভাবে কেউ কাঁদছে না। কারণ বুবলি জেনেশুনে বিষ করেছেন পান। অপু কারও সংসার ভাঙেনি, বুবলির কারণে অপুর সংসার ভেঙেছে, আব্রাহাম বঞ্চিত হয়েছে। বুবলি ভেবেছিল সে একাই রাজত্ব করবে সাকিবের রাজ্যে, তার কথাবার্তা ভাবসাব সবকিছু বেশ অহংকারী ও অতিমাত্রায় সাকিবের প্রতি প্রেম ভক্তি ছিল। অপু বিশ্বাসকে নিয়ে সবসময়ই বিরুপ মন্তব্য করেছে বুবলি। প্রচণ্ড আত্মঅহংকারী ও স্বার্থপর মেয়ের পরিচয় দিয়েছে বুবলি। তাই সবাই সাকিবের সমালোচনা করলেও বুবলির প্রতি কারও দয়া মায়া দেখা যাচ্ছে না সেরকমভাবে যদিও বুবলির বিষয়টিও আমরা প্রতিবাদ জানাই।
তবে একটা কথা শাকিব খানকে প্রশ্রয় না দিলে উনিতো আপনার কোন ক্ষতি করতে পারবে না। এই সুন্দরী মেধাবী প্রথম সারির নায়িকাগুলো কেন একই ভুল করবে বারবার। চলচ্চিত্রে অভিনয় করতে এসেছেন নিজের যোগ্যতায় আপনাকে কেন একজন একজন নায়ককে অবলম্বন করে বাঁচতে হবে, কেন গোপনে বিয়ে করতে হবে অন্যের সংসার ভেঙে! কেন গোপনে সন্তান জন্ম দিতে হবে! বিয়ে আর সন্তানের মত পবিত্র ও সুখের বিষয় যদি গোপন করেন তাহলে জীবনে সুখ বলে কি থাকে!
এখন শুনছি অপু বিশ্বাসের মত বুবলির ছেলের খরচপাতিও দেন না শাকিব, বুবলিরও খোঁজ খবর নেন না। যে আচরণ বুবলির সাথে সম্পর্ক হওয়ার পর অপু বিশ্বাসের সাথে করেছিলেন একই আচরণ বুবলির সাথে হচ্ছে শাকিবের অন্যদিকে মনোযোগ যাওয়ার কারণে। প্রকৃতির বিচার বলে একটা কথা আছে, যাক সেটা বুবলি এতদিনে ঠিকই বুঝেছেন। অন্যকে বঞ্চিত করে বা অন্যের ক্ষতি করে নিজে একা ভোগ করা যায় না। এটাও মেয়েদের জন্য একটা লেসন। আজকাল মেধা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষিত মেয়েরা এভাবেই ফাঁদে পড়ে নিজেদের সর্বনাশ করছে। তাঁরা কি মেধা ও সৌন্দর্যের জোরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শক্ত আসন গড়তে পারতেন না? তাদের সবাইকে কেন একজন নায়ককেই অবলম্বন করে ক্যারিয়ার আর গোপন সংসার গড়তে হবে। এই শাকিব খান কোন ফাঁদ ফেলেন যে ফাঁদে রাত্রি অপু বুবলি পূজা সকলেরই সন্তানসহ জীবন বিপন্ন হয়। শাকিবের একজন স্ত্রী বা নায়িকা বেশিদিন ভালো লাগে না, ড্রেস পালটানোর মত স্ত্রী বা নারী সঙ্গী পাল্টান তিনি। প্রত্যেক স্ত্রীর ঘরেই তার একটি করে সন্তান রয়েছে, এই সন্তানগুলো কি সঠিকভাবে সুস্থভাবে সমাজ দেশ ও পরিবারের সম্পদ হয়ে বেড়ে উঠতে পারবে! আমি জানি না, তাঁরা যখন তাদের বাবার সম্পর্কে জানবে অবশ্যই তারা মেন্টাল ট্রমার মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠবে।
শাকিব খান সেদিনের বাচ্চা একটি মেয়ে এখন সম্ভবত টিন এজ হবে পূজা চেরিকেও ছাড় দিলেন না। ওতো বাচ্চা একটা মেয়ে আমাদের চোখের সামনে দিয়ে বেড়ে ওঠা, ওর জীবন সম্পর্কে কতটুকুই বা ধারণা হয়েছে কিন্তু শাকিব খান এই উঠতি বয়সের সুন্দরী মেধাবী পূজারও জীবন-ক্যারিয়ার হুমকির মুখে ফেলে দিলেন। এ পর্যন্ত শাকিব সম্পর্কে সবার অভিজ্ঞতা বলে তিন নায়িকার সবার যখন একই পরিণতি তখন পূজার ব্যাপারে সবাই শংকিত। তিনি এতটাই স্বার্থপর রাত্রি, অপুকে ছেড়ে বুবলিকে নিয়েও নিয়মতান্ত্রিক জীবনধারায় ফিরতে পারলেন না। এখন সবাইকে ছেড়ে সম্ভাবনাময়ী আর্টিস্ট কচি মেয়েটিকে ধরেছেন। শুনেছি শাকিব খান অসুস্থ এবং তিন ঘরের তিন সন্তানের জনক এই ভেজাল লাইফে পূজার মত বাচ্চা মেয়েটার জীবনও বিপন্ন হতে চলেছে। একজন নারী হিসেবে শাকিবের এই নারী ও শিশু নিয়ে অশোভন অনৈতিক কান্ড কোনভাবেই মেনে নিতে পারি না। হ্যাঁ উনার যদি অনেক পয়সা থাকে উনি চারজনকেই সসম্মানে সমান মর্যাদা দিয়ে সন্তানসহ রাখুক, কারও কিছু বলার থাকবে না, ইসলামে যেহেতু চার বিয়ের জায়েজ আছে। তাও নবীজি বলে কথা, আমাদের নবীর সাথেতো আর শাকিব খানের তুলনা হতে পারে না।
শাকিব খান স্বঘোষিত কিং খান বা সুপার স্টার হয়ে সবচেয়ে জঘন্য যে কাজটি করেছেন তা হল একটি নারীকে তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেছেন, তিনি ছিলেন সহকারী প্রযোজক। তিনি মামলাও করেছেন শুনলাম। ঘটনাটি ঘটেছে ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় একটি সিনেমার শুটিং এর সময়। তখন বুবলিও ছিলেন সেখানে, বুবলির আড়ালেই এই ঘটনা।
এখন আর কি বলব কতটা নিচে নামলে মানুষের বিরুদ্ধে বা একজন নায়কের বিরুদ্ধে এই ধরনের জঘন্য অভিযোগ আসতে পারে। আপনিতো আর নায়ক রইলেন না, এগুলাতো নায়কের কাজ না, এগুলো ভিলেন এর কাজ। প্রত্যেকের সাথেই তিনি ভিলেন এর মত একই আচরণ করেছেন। দেশের মানুষ তাকে একজন আদর্শ নায়ক ভাবতেও দশবার ভাববে। তার এই ধরনের কর্মকাণ্ড দেশ ও চলচ্চিত্রের জন্য হুমকিস্বরুপ
লেখকঃ শিক্ষক ও বাচিকশিল্পী