ডেস্ক নি্িউজঃ
আন্দোলন-বিক্ষোভে বিপর্যস্ত শ্রীলঙ্কা। গণবিক্ষোভের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে গতকাল ই-মেইলে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। এরপর বিশ্বজুড়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, কে হবেন শ্রীলঙ্কার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত তিন ব্যক্তি সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন।
এই তিন ব্যক্তির মধ্যে একজন ছয়বার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, একজন প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা এবং অপরজন সাংবাদিক থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে উঠেছেন।
ইতিমধ্যে গোতাবায়ার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টের স্পিকার। আগামী সপ্তাহে পার্লামেন্টের ২২৫ জন সদস্য নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য ভোট দেবেন। যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন, তাঁকে অবশ্যই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে শ্রীলঙ্কার বিক্ষুব্ধ জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।
রনিল বিক্রমাসিংহে
বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি গত মে মাসে ষষ্ঠবারের মতো শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। দুজন রাজনৈতিক সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়বেন।
বর্তমান পার্লামেন্টে রনিল বিক্রমাসিংহের দলের একটি মাত্র আসন রয়েছে। তবে তাঁর প্রতি ক্ষমতাসীন দল শ্রীলঙ্কা পোডুজানা পেরামুনা (এসএলপিপি) এবং গোতাবায়ার ভাই বাসিল রাজাপক্ষের সমর্থন রয়েছে।
এসএলপিপির একজন নেতা বলেছেন, দলের সদস্যরা মনে করেন দেশের চলমান অর্থনৈতিক সংকট বেশ ভালোভাবেই মোকাবিলা করছেন রনিল বিক্রমাসিংহে। তিনি বেলআউট প্যাকেজ ও নতুন বাজেটের জন্য আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
কিন্তু ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ শ্রীলঙ্কার বিক্ষুব্ধ জনতার কাছে ইতিমধ্যে অজনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিক্ষোভকারীরা তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে বিক্ষোভকারীরা উল্লাস করেছে। চলতি সপ্তাহেই তাঁর কার্যালয়ে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষ হয়েছে।
সাজিথ প্রেমাদাসা
শ্রীলঙ্কার প্রধান বিরোধী দল সামাগি জনা বালাওয়েগায়ার (এসজেবি) নেতা সাজিথ প্রেমাদাসা। তাঁর বয়স ৫৫ এবং তিনি একজন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। কিন্তু পার্লামেন্টে তাঁর দলের মাত্র ৫০ জন আইনপ্রণেতা রয়েছেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ের জন্য তাঁকে দ্বিদলীয় সমর্থন গড়ে তুলতে হবে।
প্রেমাদাসা লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৯৩ সালে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলায় তাঁর বাবা প্রেসিডেন্ট রণসিংহ প্রেমাদাসা নিহত হওয়ার পর তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।
সাজিথ প্রেমাদাসা ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে প্রবেশ করেছিলেন। পরে উপস্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১৮ সালে তিনি আবাসন নির্মাণ ও সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী নিযুক্ত হন।
দুল্লাস আলাহাপেরুমা
এসএলপিপির একজন সিনিয়র আইনপ্রণেতা হিসেবে নিজ দলের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন ৬৩ বছর বয়সী দুল্লাস আলাহাপেরুমা। রাজনীতিতে প্রবেশ করার আগে তিনি ছিলেন একজন সাংবাদিক। এসএলপিপির আরেক আইনপ্রণেতা চারিথা হেরাথ বলেছেন, প্রেসিডেন্ট পদে দুল্লাস লড়বেন। তাঁর মতো যোগ্য ব্যক্তিকে পাওয়া কঠিন হবে।
দুল্লাস আলাহাপেরুমা ১৯৯৪ সালে শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্টে প্রবেশ করেছিলেন। তারপর গণমাধ্যমমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত এপ্রিলে বিক্ষোভকারীরা গোতাবায়া রাজাপক্ষের বাসভবন ঘেরাও করার পর মন্ত্রিসভা ভেঙে দিলে তিনি পদত্যাগ করেন। সূত্র: রয়টার্স