শহিদুল ইসলাম খোকন :
বর্তমানে গ্রামের হাটবাজারগুলোতে রয়েছে এসি ও নন-এসি সেলুন। আছে পুরুষদের জন্য পারলারও। সেসব সেলুন ও পারলারে চুল ও দাড়ি কাটার জন্য রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মেশিন। এসবই হয়েছে আধুনিকতার ছোঁয়ায়। কিন্তু এক যুগ আগে আধুনিকতার ছোঁয়া ছিল না। তখন খোলা আকাশের নিচে টুল পিড়িতে বসে চুল -দাড়ি কাটা হতো।কালক্রমে হারিয়ে যেতে বসেছে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের চুল ও দাড়ি কাটার চিত্র।
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্য অনেক পেশার মতোই নরসুন্দরের এই পেশা প্রায় বিলুপ্তির পথে। তারপরও কখনও কখনও গ্রামাঞ্চল ও চরাঞ্চলের হাটবাজারে চোখে পড়ে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরের কর্মযজ্ঞ।
ভ্রাম্যমাণ এসব নরসুন্দর চুল কাটার বা ছাঁটার যন্ত্রপাতি নিয়ে বসেন গ্রামীণ ও চরাঞ্চলের হাটবাজারগুলোতে। হাটবাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে আসা ক্রেতারাই নরসুন্দরদের ‘কাস্টমার’।
সরেজমিন মতলব উত্তর উপজেলার চরা অন্চলে হাটের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা যায়, হাটের বিভিন্ন স্থানে বসে চুল ও দাড়ি কাটার কাজ করছে
কাস্টমারদের পিঁড়ি বা টুলে বসিয়ে চুল ও দাড়ি কাটছেন।
নরসুন্দরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক যুগ ধরে এভাবেই দাড়ি ও চুল কাটছেন তারা। বিভিন্ন এলাকা থেকে হাটে আসা মানুষজন তাদের কাস্টমার। তারা বিভিন্ন হাটবাজারে খোলা আকাশের নিচে বসে চুল ও দাড়ি কেটে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। তারা চুল কাটতে ৩০-৪০ টাকা এবং শেভ বা দাড়ি ঠিক করতে ২৫-৩০ টাকা নেন।
চর এলাকা থেকে হাটে আসা রবিউল বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে হাটে এসে এই ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের কাছে চুল কাটাতাম। এখন সন্তানদের নিয়ে আসছি। সেলুনে চুল ও দাড়ি কাটাতে গেলে ৫০ থেকে ১০০ টাকা লাগে। আর এদের কাছে মাত্র ৩০ থেকে ৫০ টাকায় চুল ও দাড়ি কাটানো যায়।
উপজেলার গজরা ইউনিয়নের রাজুর কান্দি গ্রামের বাসিন্দা আবদুল জলিল বলেন, আগে মানুষ ভ্রাম্যমাণ এই নরসুন্দরদের দিয়ে চুল-দাড়ি কাটানতো। তাদের কাছে অনেক কম টাকায় চুল-দাড়ি কাটানো যেতো। এখন আর তাদের দেখা যায়না। তবে কোন শিশু জন্ম নিলে সপ্তম দিনে ও সুন্নতে খতমার সপ্তম দিনে নরসুন্দরা বাড়িতে এসে ডুল পিড়িতে বসে চুল কাটার দৃশ্য চোখে পড়ে।
নরসুন্দর অরুণ বলেন, ‘এ পেশা আমার বাপ- দাদার ছিল। দাদাও বাবার মৃত্যুর পর আমি এ পেশায় আছি। হাটে চুল ও দাড়ি কেটে যা আয় হয় তা দিয়েই সংসার চালাচ্ছি।
এ বিষয়ে ব্যাবসায়ী নূরে আলম নূরী বলেন, যারা এক সময় আমার বাপ-দাদাদের চুল ও দাড়ি কেটেছেন তারা মারা গেছেন। তাদের সন্তানরা এখন বেশিরভাগই শহরমুখী। কেউ জীবিকার সন্ধানে আবার কেউ কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য শহরে পাড়ি জমিয়েছেন। তাই বিলুপ্তির পথে এ পেশা।