মোঃ সাজেদুল ইসলাম, ফুলছড়ি (গাইবান্ধা):
গাইবান্ধা জেলার ২৫ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তির একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র জেলা সদরের জেনারেল হাসপাতাল। এই হাসপাতালে নিয়মিতভাবে ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার না করায় হাসপাতালের ভেতর ও বাহির পচা দুর্গন্ধে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ আর রোগজীবাণুতে এখানে সুস্থ হতে আসা রোগীরাই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
১৯৮৪ সালে স্থাপিত ৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর এই হাসপাতাল। ২০০৫ সালে এটিকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হয় আর ২০১৪ সালে উন্নীত করা হয় ২০০ শয্যায়। পাশেই ২০০ শয্যার ভবন নির্মাণ ও প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও জনবল অনুমোদন না পাওয়ায় পুরাতন ভবনেই ৫০ শয্যার অবকাঠামোতেই চলছে চিকিৎসা সেবা। জেলার চরাঞ্চলসহ সাত উপজেলা থেকে প্রতিদিন
অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিতে আসলেও চিকিৎসার মানের পাশাপাশি হাসপাতালের পরিষ্কার- পরিচ্ছন্ন পরিবেশ না থাকায় রোগীরা ভর্তি হয়েও সুস্থ না হয়ে ফেরত যাচ্ছে।
এই হাসপাতালে ভেতর ও বাহিরের চিত্র প্রায় একই। দেখে মনে হবে যুগ-যুগ ধরে টয়লেট, ওয়াশরুম পরিষ্কার করা হয়নি। এদিকে মুক্তিযোদ্ধা রুম, জরুরী সেবা কেন্দ্র, মহিলা ও শিশু ওয়ার্ডসহ সবস্থানেই অপরিষ্কারের ছোঁয়া। একারণে টয়লেটে গিয়ে বেশির ভাগ রোগীও বমি করে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রোগী ও সাধারণ মানুষজন হাসপাতালে এসে ময়লা আবর্জনা পচা গন্ধে নাক চেপে ঢুকতে হয়। রোগীর ফেলে দেয়া খাবার, মলমূত্র ও রোগীর ব্যবহার্য বর্জ্য দিয়ে ভরে গেছে হাসপাতালের বারান্দা ও বাথরুম। আর এগুলো ফেলার জন্য নেই নিদিষ্ট স্থান ও ডাস্টবিন। এখানে চিকিৎসা নিতে আসা শিশু ওয়ার্ডের এক মহিলা জানান, টয়লেটে গেলেই বমি হয়। মলমূত্রের স্তুপ পড়েছে অথচ পরিষ্কার করা হচ্ছে না। একই কথা জানান তিনদিন থেকে ভর্তি থাকা মোল্লারচরের রোগী জমিলা বেগম। তিনি বলেন, পায়খানা প্রসাব পার হয়ে প্রয়োজনীয় কাজ করে নিতে হয়।
এত সমস্যার পরে আবার বাড়তি বিড়ম্বনা সৃষ্টি করেছে হাসপাতাল সংস্কারে শ্রমিকদের ঠকঠক শব্দ আর ধুলাবালি। কোন পর্দা না দিয়েই ঘষামাজার কাজ করা হচ্ছে শিশু ও মহিলা ওয়ার্ডের ওয়ালে। এতে করে ভর্তিকৃত রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আর পর্দা দিয়ে ধূলাবালি পরিষ্কারের কথা রোগীরা জানালে কেউ শুনছেন না তাদের কথা। আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা বোয়ালী গ্রামের জুয়েল মিয়া বলেন, হাসপাতালের চারপাশের বর্জ্য ও ময়লার স্তুপে নাকে রুমাল দিয়ে আসতে হয়। তিনি বলেন, দেখে মনে হয় হাসপাতালে তদারকির জন্য কেউ নেই। তবে, হাসপাতালের দায়িত্বপালনকারী নার্স বলেন, সংস্কার ও পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে রোগীদের বিড়ম্বনা ও দুর্ভোগের বিষয়টি স্বীকার করলেও স্বল্প সংখ্যক কর্মী দিয়েই পরিষ্কার রাখা হচ্ছে।
বিশিষ্ট উন্নয়ন কর্মী ও গবেষক এম. আবদুস সালাম জানান, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা খবুই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে পরিকল্পনা করে জনগণের সেবা নিশ্চিত করা যেতে পারে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি। হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সিহাব মো. রেজানুর রহমান বলেন, হাসপাতালে পরিষ্কার – পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি রয়েছে।
১০০ শয্যার হাসপাতাল চলছে ৫০ শয্যা হাসপাতালের জনবল দিয়ে। আবার ৫০ শয্যার মধ্যেও অর্ধেক জনবল শুন্য রয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, কয়েক মাস পূর্বে অন্য একটি ব্যবস্থাপনায় ২০জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োজিত ছিল , ৩ মাস ধরে চলছে মাত্র চারজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে। তিন সিফটে পরিষ্কার – পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা সম্ভব হয়ে ওঠেনা বলে তিনি জানান। হাসপাতালের ভেতর ও বাহিরের পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে চিকিৎসা সেবার মান বৃদ্ধিতে কর্তৃপক্ষ সু-দৃষ্টি দিবে এমনটাই প্রত্যাশা সাধারণ মানুষজনের।