পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, সঠিক তথ্য পৌঁছাতে পারলে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চয়ই র্যাবের ওপর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে। তবে তার জন্য কিছু সময় লাগবে।
আজ বুধবার জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে দেওয়া বিবৃতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন এ কথা বলেন। তিনি জানান, ২০১৫ সাল থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রে মোট আটটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করা হয়। তবে সরকার যুক্তরাষ্ট্রে কোনো লবিস্ট নিয়োগ করেনি। অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য প্রচারে পিআর ফার্ম নিয়োগ করেছে সরকার।
যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ নিয়ে গত রোববার জাতীয় সংসদে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতি দাবি করেছিলেন বিএনপির সাংসদ হারুনুর রশীদ ও জাতীয় পার্টির সাংসদ মুজিবুল হক।এর প্রেক্ষাপটে আজ জাতীয় সংসদে ৩০০ বিধিতে এ বিষয়ে বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
র্যাবের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানান আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, আগামী মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পার্টনারশিপ ডায়ালগের কাজ শুরু হবে। এপ্রিল মাসে সিকিউরিটি ডায়ালগ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একাধিক বৈঠক আয়োজন করা হচ্ছে।
শান্তিরক্ষী বাহিনী থেকে র্যাবকে বাদ দিয়ে কতিপয় সংস্থার চিঠির প্রসঙ্গ টেনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি ১২টি আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থা জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেলকে একটি চিঠি লিখেছে। এ বিষয়ে ইউএনের স্পোকপারর্সন গণমাধ্যমকে বলেছেন, জাতিসংঘ যখনই কাউকে পিস কিপিংয়ে নেয়, তারা নিজের নিয়মে যাচাই–বাছাই করে কাজটি দেয়।
আব্দুল মোমেন বলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা প্রায় ১৮টি কমিটির লোকজনকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠি দিয়ে তাঁরা দেশের সব রকম সাহায্য বন্ধ করতে বলেছেন। তাঁরা এ-ও বলেছেন, বাংলাদেশের কারণে আমেরিকার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে। তাঁরা রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়া নিয়েও অপপ্রচার চালিয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগ করা সে দেশের আইনে একটি বৈধ প্রক্রিয়া। ভারত, পাকিস্তান, কাতার, সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়নে লবিস্ট নিয়োগ দিয়ে থাকে। কিন্তু লবিস্ট নিয়োগের উদ্দেশ্য কী, সেটা হলো মুখ্য।
আব্দুল মোমেন বলেন, বিএনপি-জামায়াত যুক্তরাষ্ট্রে মোট ৮টি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছে। ২০১৪ সালে জামায়াত একটি ফার্ম নিয়োগ করে যুদ্ধাপারাধীদের বিচার বন্ধ করার জন্য। এ জন্য তারা দেড় লাখ ডলার দেয়। বিচার বন্ধে তারা আরেকটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেছিল। আর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে প্রভাবিত করার জন্য পিস অ্যান্ড জাস্টিস নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ লাখ ৩২ হাজার ডলার দিয়ে নিয়োগ করা হয়।
বিএনপি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৭ লাখ ডলার প্রতিবছর খরচ করেছে। প্রতি মাসে রিটেইনার ফি ১ লাখ ২০ হাজার ডলার ব্যয় করেছে। এই তথ্যগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটে দেওয়া আছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি ২০১৭ সাল পর্যন্ত চারটি এবং ২০১৯ সালে একটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে। আর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকাতে জামায়াত-বিএনপি তিনটি লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করে।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘দুঃখের বিষয় হচ্ছে, লবিস্টরা এমন সব বক্তব্য তুলে ধরেছেন, যেগুলো দেশের মানুষ জানলে ধিক্কার দেবে। লবিস্ট চিঠি দিয়ে বাংলাদেশে সাহায্য-সহায়তা বন্ধ করে দিতে বলেছে। উন্নয়ন যাতে ব্যাহত হয়, তার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বলেছে।’