তপন দাস, নীলফামারী থেকেঃ
ভালেবেশে বিয়ে অবশেষে যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় নীলফামারীর ডিমলায় দুলালী আক্তার (২১) নামের এক গৃহ বধুর আত্মহত্যা করেছে। ১৭ সেপ্টেম্বর (শনিবার) রাতে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে নীলফামারী সদর হাসপাতাল ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছে।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানী ইউনিয়নের কাকড়া এলাকার মৃত তফছের আলীর মেয়ে দুলালী আক্তার। ছয় মাস আগে প্রেমের সম্পর্ক করে গোপনে নাউতারা ইউনিয়নের দক্ষিণ কাকড়া গ্রামের শহীদুল ইসলামের ছেলে বাবুল হোসেনের সহিত বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। দুলালী আক্তার রংপুর বেগম রোকেয়া কলেজ ও বাবুল হোসেন রংপুর কারমাইকেল কলেজে সম্মান শ্রেণিতে পড়াশুনা করতেন। দুই বছর আগে পড়াশুনাকালীন তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
২০২২ সালের ১৩ ফেবুয়ারী রংপুরের একটি কাজী অফিসে কুড়ি হাজার টাকা দেনমোহর ধার্য করে দুলালী ও বাবুল এর বিয়ে হয়। এ সময় বিয়ের বিষয়টি পরিবারের অন্য সদস্যদের না জানানোর জন্য দুলালীকে চাপ দেন স্বামী বাবুল। বিয়ের ৬ মাস অতিক্রম হলেও বিষয়টি কাউকে জানাননি দুলালী। পরবর্তীতে বাবুলের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে তাঁকে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেন দুলালী। কিন্তু দুলালির কথায় স্বামী বাবুল হোসেন রাজি না হয়ে তাকে ঘরে তুলতে মোটা অংকের যৌতুক দাবি করেন ।পরে বিষয়টি জানাজানি হলে দুলালীর পরিবারের কাছে ১৫ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন বাবুল ও তার পরিবার।
দুলালীর বড়ভাই জমসের আলী জানান, এ বিষয়ে দুই পরিবারের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে দুলালীর পরিবার ৮ লক্ষ টাকা যৌতুক দিতে রাজি হই। কিন্তু বাবুল ও তার পরিবার ১৫ লক্ষ টাকা যৌতুক দাবি করায় কোনো প্রকার সমঝোতা হয়নি। দুলালীর পরিবার এতো টাকা দিতে না চাইলে দুলালীকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন স্বামী বাবুল। পরে এই নির্যাতন সইতে না পেরে কলেজ ছাত্রী দুলালী নিজ বাড়িতে কীটনাশক পান করে আত্মহত্যা করেন। পরে পরিবারের লোকজন বুঝতে পেরে বিষয়টি ডিমলা থানায় অবহিত করে।
এ ব্যাপারে বাবুলের বড়ভাই মহিকুল ইসলাম বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, দুলালী তার পারিবারিক কারনে আত্মহত্যা করেছেন। আমরা কখনও যৌতুকের জন্য চাপ দেই নাই।
এ ব্যাপারে ডিমলা থানার পুলিশ পরিদর্শক বিশ্বদেব রায় জানান, ঘটনাস্থল থেকে দুলালীর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নীলফামারী সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।