মোঃ আমজাদ হোসেন রতন, নাগরপুর(টাঙ্গাইল)ঃ
টাঙ্গাইলের নাগরপুরে জমে উঠেছে মৌসুমী ফল তালের শাঁস বিক্রির ধুম। উপজেলার বিভিন্ন রাস্তায়, সরকারি কলেজ গেইট, উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে, বাজারের বিভিন্ন মোড়ে প্রতিদিন কাঁচা তাল নিয়ে বসছেন ব্যবসায়ীরা। কিশোর থেকে শুরু করে বৃদ্ধরাও ওই মৌসুমী ফল বিক্রিতে মেতে উঠে আর ক্রেতারা পায় নতুন স্বাদ।
প্রতি পিস তালের শাঁস (কাঁচা তাল) বিক্রি হচ্ছে পাঁচ থেকে দশ টাকায়া, এক কুড়ি তালের শাঁস ২০০-৩০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। যেখানে এক কুড়ি পাকা তাল ১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, উপজেলার ১২ ইউনিয়নে প্রায় দুই হাজার সাত’শ তাল গাছ রয়েছে।
তালে কুশ বা শাঁস অন্যতম ভিন্নধর্মী রসালো ফল তালের আঁটি নামে বেশি পরিচিত। নরম সাদা অংশটি খুবই সুস্বাদু। গ্রাম্য ভাষায় এটি ‘তালকুশ’ বা তালের আঁটি বলা হয় । প্রচুর গরমে তালের এই শাঁসটি শহর ও গ্রামের মানুষের কাছে দিন দিন খুবই প্রিয় হয়ে উঠছে। উপজেলার বেশ কিছু এলাকায় তালগাছগুলোতে কচি তালে ভরে গেছে। কৃষকদের গাছের তালের শাঁস যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। শিশুসহ সব বয়সী লোকের মধ্যে এই তালের শাঁসের কদর দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সরেজমিন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, সদর বটতলা, কলেজ রোড ও তালতলা ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। বিক্রেতা শাঁস কেটে সারতে পারছে না, ক্রেতারা দাঁড়িয়ে রয়েছে শাঁস নিতে। তালের শাঁস বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন শাহীন, ফকিরসহ অন্তত আরও দশ জন।
তাল শাঁস বিক্রেতা বাবনাপাড়া এলাকার মো. শাহীন মিয়া বলেন দশ বছর ধরে এ পেশায় নিয়োজিত। স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান নিয়েই সংসার। প্রতি বছরই এসময়ে তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালাই। গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল কিনে গাছ থেকে পেরে এনে শাঁস বিক্রি করেন।
তবে গাছে ওঠে, বাঁধা ধরে পাড়া সবচেয়ে কষ্টকর। জৈষ্ঠ্য মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত চলবে তালের শাঁস বিক্রির কাজ। প্রতিদিন প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ পিস শাঁস বিক্রি করা যায়। একটি শাঁস পাঁচ থেকে দশ টাকা দরে বিক্রি করছি (আকার অনুযায়ী)। এতে দিনে প্রায় ছয় থেকে সাত’শ টাকা লাভ হয়।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রোকনুজ্জামান শাঁসের পুষ্টি গুনাগুণ সম্পর্কে বলেন, তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দুর করে। এছাড়া ভিটামিন, মিনারেল, জিংকসহ নানা ধরনের ভিটামিন আছে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তালে শাঁস ডায়বেটিকস্ রোগীদের জন্য ক্ষতিকর নয় বলেও জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল মতিন বিশ্বাস বলেন, পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৭০০ তালগাছ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, উপজেলার বিভিন্ন সড়কে বজ্রপাত প্রতিরোধে কাবিখা প্রকল্পের আওতায় প্রায় ২০০০ তালের বীজ ইতিপূর্বে রোপণ করা হয়েছে। তাল গাছ রোপন এবং পরিচর্যায় কৃষকের সার্বিক সহযোগিতায় উপজেলা কৃষি উপসহকারি কর্মকর্তারা কৃষকদের পাশে আছেন।