সুজন মাহমুদ, যশোরঃ
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছা বাসস্ট্যান্ডে মসজিদের সামনে যমদূতে হিসাবে দাঁড়িয়ে জীবন কেড়ে নেওয়ার প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বড় আকারের শুকিয়ে যাওয়া মরা রেইনট্রি (শিশু গাছ) গাছ। অতিসামান্য বাতাসে এই গাছের শুকনো ডাল ভেঙ্গে পড়ছে। ইতিমধ্যেই কয়েকজন এই ভাঙ্গা ডালের আঘাতের শিকার হয়ে আহত হয়েছেন। বড় আকারের ঝড় বা বৃষ্টি হলে এই গাছটি উপড়ে পড়ে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রাণহানীর আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
যশোর জেলার মধ্যে ঐতিহ্য বহন করা একটি বাজার হল ঝিকরগাছা বাজার। এই বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বাসস্ট্যান্ড। আর বাসস্ট্যান্ডের কেন্দ্রীয় জামে সমজিদের সামনে যমদূতে হিসাবে দাঁড়িয়ে জীবন কেড়ে নেওয়ার প্রতীক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে বিশাল বড় আকারের শুকিয়ে যাওয়া মরা রেইনট্রি (শিশু গাছ) গাছ।
এই গাছের একেবারে নীচেই আছে যশোর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ৩৩ হাজার ভোল্টের বৈদ্যুতিক তারের খুঁটি আর সেই সাথে রয়েছে তিনটি বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, এস.কে সুপার মার্কেট, মাজেদা স্পেশালাইজড ডায়াগনেষ্টিক সেন্টার, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ রশিদুল আলম’র চেম্বার, ঝিকরগাছা শার্শা ও বেনাপোল ট্রাক মালিক সমিতির অফিস, হোটেল, মুদিখানা, চায়ের দোকান সহ ভ্রাম্যমাণ ফলের দোকান। যশোরগামী বাসগুলো প্রতিনিয়ত এই গাছের নীচে এসে দাঁড়িয়ে থাকে।
তাছাড়াও সারাদিন এই গাছের নীচে দিয়ে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করে। এরকম ব্যস্ততম একটি জায়গায় এই মরা গাছটি দাঁড়িয়ে থাকায় জনমনে সর্বদা চরম আতংক বিরাজমান। স্থানীয় জনগন এই মরা শুকনো গাছটি সহ যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের সকল গাছ অপসারণ করে অনতিবিলম্বে রাস্তাটি ছয় লেনে করার দাবী জানিয়েছেন।
গাছের নীচে অবস্থিত চা বিক্রেতা আঃ হাকিম জানান, শুধুমাত্র পেটের দায়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এখানে দোকানদারি করি। সামান্য বাতাসেই এই মরা গাছের ডাল ভেঙে পড়ে। আমার দোকানের ওপরেও একবার গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আমি আহত হয়েছি। গাছটি কেটে ফেললে ভালো হয়।
বাসস্ট্যান্ড জামে মসজিদের পেশ ইমাম মাও. মোঃ আব্দুস শুকুর বলেন, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে নামাজ পড়তে আসা মুসুল্লিদের নিরাপত্তা নিয়ে সবসময়ই শংকিত থাকি, কখন না জানি কার মাথায় এই মরা গাছের ডাল ভেঙ্গে মসজিদের উপর পড়ে। স্থানীয় সংসদ সদস্যকেও বিষয়টি জানিয়েছি কিন্তু গাছ কাটা হয়নি।
এস.কে সুপার মার্কেটের মালিক বাবুল হোসেন বলেন, এই গাছটি যদি ভেঙ্গে পড়ে তাহলে আমার মার্কেট এর ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হবে। আমার দোকান সহ এই গাছের নীচে অবস্থিত আরও দোকানে সবসময় মালিক, কর্মচারী এবং খরিদদার থাকে। সবসময় আতংকে থাকতে হয়। কখন না জানি গাছ ভেঙ্গে মানুষের উপর পরে মানুষ মারা যায়!
ঝিকরগাছার ঐতিহ্যবাহী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সেবা’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আশরাফুজ্জামান বাবু বলেন, আমরা সংগঠনের মাধ্যমে গত ৬ বছর ধরে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের সকল গাছ অপসারণের দাবিতে আন্দোলন, সংগ্রাম, মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে চলেছি। কিন্তু পরিবেশবাদী নামধারী কিছু অবিবেচক উন্নয়ন বিরোধী লোকের একটি আবেদনের দোহাই দিয়ে এই গাছগুলো কাটা হচ্ছে না যেটি অত্যান্ত দুঃখজনক। মরা রেইনট্রি (শিশু গাছ) গাছ যমদূতে হিসাবে দাঁড়িয়ে জীবন কেড়ে নেওয়ার প্রতিক্ষায় দাড়িয়ে আছে। না জানি কখন এই যমদূতের থাবার শিকার হতে হয় আমাদের এই সমাজের মানুষের।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মাহবুবুল হক বলেন, এই গাছ সহ যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের সকল মৃত ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো অপসারণের জন্য আমি জেলা পরিষদে চিঠি দিয়েছিলাম কিন্তু কোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় গাছগুলো অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। এই গাছগুলোর কারনে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটছে।