মাহবুব আলম লাভলুঃ
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনয়ন করা হয়েছে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমকে। মঙ্গলবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্রের ২৬ (ক) ধারা মোতাবেক দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তাকে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে মনোনীত করেছেন বলে জানানো হয়েছে।
ড. শামসুল আলম ২০২১ সালে ১৮ জুলাই টেকনোক্র্যাট কোটায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সাবেক সদস্য ও সিনিয়র সচিব ড. শামসুল আলম। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. শামসুল আলম ৩৫ বছরের অধ্যাপনা শেষে ২০০৯ সালের ১ জুলাই পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। সিনিয়র সচিব পদে দীর্ঘ এক যুগ চুক্তিভিত্তিক দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২১ সালের ৩০ জুন তার সবশেষ চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ড. আলমকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী হিসাবে মনোনীত করেন।
ড. শামসুল আলম ১৯৫১ সালে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর শেষ করেন। পরের বছর একই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দিয়ে ২০১৫ পর্যন্ত শিক্ষকতায় নিযুক্ত ছিলেন। সেখানে কর্মরত অবস্থাতেই ১৯৮৩ সালে ব্যাংককের থাম্মাসাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৯১ সালে ইংল্যান্ডের নিউ ক্যাসেল আপন টাইন ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতি বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
এ ছাড়াও জার্মানির হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়, বেলজিয়ামের ঘেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং নেদারল্যান্ডের ভাগিনিঙ্গেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস স্কুলে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতা করেন ড. শামসুল আলম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডজাঙ্কট ফ্যাকাল্টি হিসেবে কৃষি অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষকতায়ও যুক্ত ছিলেন ড. শামসুল আলম।
ড. শামসুল আলম জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থায় ২০০২ সালের মার্চ থেকে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পূর্ণকালীন চাকরিও করেছেন। ইউএনডিপি বাংলাদেশে ১৪ মাস সিনিয়র স্কেলে পূর্ণকালীন জাতীয় কনসালটেন্ট হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতীয় দৈনিকসমূহে উপ-সম্পাদকীয় পৃষ্ঠায় তিন দশকের অধিক সময় ধরে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয়ে বিশ্লেষণধর্মী অসংখ্য কলাম লিখেছেন। এছাড়া গবেষণা গ্রন্থ, পাঠ্যপুস্তকসহ অর্থনীতি বিষয়ক তার প্রকাশিত গ্রন্থ সংখ্যা ১২টি।
ড. শামসুল আলম বাংলাদেশ ছাত্রলীগের একজন মেধাবী সংগঠক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তিনি ১৯৭৩-১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য মনোনীত হন এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭২-৭৩ সালে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই বাংলা ফজলুল হক হল শাখার সভাপতি মনোনীত হন। ১৯৬৬ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত হন । ১৯৭১ সালে মতলব থানা মুজিব বাহিনী গঠনে অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন। ১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ছয় দফা, ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা হিসাবে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন। ১৯৭০ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার সমর্থনে গোলাম মোর্শেদ ফারুকির নির্বাচনী প্রচারণায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
ড. শামসুল আলম একজন সৎ, সাহসী, প্রতিভাবন আদর্শ শিক্ষক ও রাজনীতিবিদ। সেই সাথে একজন ধৈয্যশীল, শান্তশিষ্ট, বিনয়ী-ভদ্র, উদার, পরোপকারী, নিরহংকার ও নির্মোহ ব্যক্তিত্ব। একজন পরিচ্ছন্ন বহুমাত্রিক প্রতিভার অধিকারী সজ্জন ব্যক্তি একাধারে তিনি একজন শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ, লেখক ও গবেষক এবং একজন অত্যন্ত সফল পরিকল্পনাবিদ ও রাজনীতিবিদ।