আব্দুল মান্নান সিদ্দিকীঃ
মুন্সীগঞ্জ জেলার উপজেলা শ্রীনগরে অপহরন মামলার আসামী শ্রীঘরে গেলেও অপহৃত ছাত্রের স্কুলে উপস্থিতিতে বিস্ময় দেখা দিয়েছে।১৪ আগষ্টবিকেল সাড়ে ৪টার দিকে উপজেলার রাঢ়ীখাল ইউনিয়নের বালাশুর এতিমখানা রাস্তা হতে কামারগাঁও আলহাজ্ব ফজলুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্র জিদান(১৩)কে অপহরন করার অভিযোগ এনে মুন্সীগঞ্জ আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ছাত্রের মা মিরা আক্তার (৩৮) একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন।
পরে ২৭ আগস্ট শ্রীনগর থানায় মামলাটি রেকর্ড হয়। যার মামলা নং- ৩৫(৮)২২। উক্ত মামলায় ৩০ আগস্ট মামলার ১নং আসামী আলী হোসেনকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালত প্রেরন করেন। অন্যদিকে মামলার এজাহারে জিদানকে ১৪ আগষ্ট অপহরন করার কথা উল্লেখ করলেও তার দুই দিন পর অর্থ্যাৎ ১৬ আগস্ট জিদান বিদ্যালয়ে ক্লাস করেছে বলে জানান বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সেলিম হোসেন। অপহৃত ছাত্র কিভাবে বিদ্যালয়ে ক্লাস করেছেন তা নিয়ে বিস্মিত এলাকাবাসি। তবে ১৬ আগস্টের পর তাকে আর বিদ্যালয়ে দেখা যায়নি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ৩ বছর পূর্বে আসামী আলী হোসেনের স্ত্রী নাদিরা বেগম(৩৮) পাশ্ববর্তী পূর্ব কাঠালবাড়ী এলাকার অপহৃত ছাত্রের মা মিরা আক্তারের নিকট থেকে ১০ হাজার টাকা মাসিক সুদে ১লক্ষ টাকা নেন। কয়েক মাস সুদের টাকা দিলেও পরে আর দিতে না পারায়
এই নিয়ে কয়েক দফা শালিশ হলেও পুনরায় গত ২ মাস আগে আসামী আলী হোসেনের বাড়ীতে শালিশ হয়। শালিশে অপহৃত ছাত্রের মা ৩লক্ষ টাকা পাওয়ার দাবী উঠালে গ্রহিতা নাদিরা ১লক্ষ টাকার কথা জানায়। মিরা বলে, সে কুরআন নিয়ে শপথ করে বলুক, আমি ১লক্ষ টাকা পাই এইটাই বিশ্বাস করবো। শালিশদারদের কথা মত নাদিরা তার ছোট মেয়েসহ কোরআন ধরে শপথ করে ১লক্ষ টাকা পাবেন বলে উল্লেখ করেন। কিন্তু মিরা শালিশদারদের উপেক্ষা করে টাকা না নিয়ে চলে যায়।
শালিশদার মাসুদ মাদবরের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমিসহ স্থানীয় দুইজন মেম্বারসহ আরো অনেকেই শালিশে ছিলাম। কিন্ত শালিশ উপেক্ষা করে টাকা না নিয়েই মিরা চলে যায়, গিয়ে নাদিরার স্বামী আলী হোসেনকে আর বিদেশে যেতে দিবে না, কিভাবে বিদেশ যায় দেখে নিবে বলে হুমকি দিতে থাকে। আমরা নাদিরাকে থানায় একটি জিডি করতে বলি। নাদিরা থানায় মিরার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ করে। অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীনগর থানার এএসআই আহসান হাবিব বলেন, আমি বাদী নাদিরা বেগমের অভিযোগ পেয়ে ঘটনা তদন্ত করি। তদন্ত করে দেখি বাদীর কাছে বিবাদী মিরা ১ লক্ষ টাকা পাবে। এ নিয়ে স্থানীয়রা শালিশও করেছে। কিন্তু বিবাদী মিরা ৪লক্ষ টাকা পাবে বলে আমাকে জানায়। আমি টাকার পাওয়ার দলিল দেখাতে বললে সে দেখাতে পারেন নাই। আমি দুই পক্ষকে ডেকে ছিলাম কিন্ত কেউ আসেনি। পরে জানতে পারি বিবাদী মিরা বাদী নাদিরার বিরুদ্ধে একটি অপহরন মামলা করেছে।
অপহরন মামলার ১নং সাক্ষী ওমর মৃধার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমি দুরে আছি আপনারদের সাথে দেখা করে কথা বললো। ২ নং সাক্ষী ফারুক শেখের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি অপহরন করতে দেখি নাই। লোকমুখে শুনছি। আমিও নাদিরার কাছে টাকা পাবো তাই সাক্ষী হইছি।
এব্যাপারে ভাগ্যকুল ইউপি চেয়ারম্যান কাজী মনোয়ার হোসেন শাহাদাৎ বলেন, আমি এই স্কুলের সভাপতি। তাই দেখলাম যে ছাত্র দুই দিন আগে অপহর হল। সে আবার দুই দিন পর স্কুলে ক্লাশ করেছে। এই মামলাটার মধ্যে রহস্য রয়েছে। বাদী মিরা ও তার বোন লাকী আক্তার আমার ইউনিয়নের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ মানুষ। তাদের সাথে কেউ পারে না। দুই দিন পর পর যাকে তাকে হয়রানী করে।
অপহরন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা শ্রীনগর থানার এসআই শুভংকর রায় বলেন, মামলাটি কোর্ট থেকে থানায় এফআইআর হিসেবে গন্য করার আদেশ দিয়েছে। তাই মামলা রেকর্ড করে ১নং আসামী গ্রেফতার করে কোর্টে চালান করি।