মাহবুব আলম লাভলুঃ
মতলব-গজারিয়া সংযোগ সেতু একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার রাজধানীর শের-ই বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি একনেক সভা অনুমোদন দেওয়া হয়। উক্ত সভায় অনুমোদন দেওয়া হয় ৪১৭৪ কোটি ৬৭ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা ব্যয়ে দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাবল স্ট্যাইড (ঝুলন্ত সেতু) নির্মাণ করা হবে।
উক্ত একনেক সভায় মতলব-গজারিয়া সংযোগ সেতু বাস্তবায়নে বিশেষ অবদান রাখেন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম । রূপকল্প ২০৪১ বাস্তবায়নের লক্ষ্য আধুনিক বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সমৃদ্ধি করতে মতলব-গজারিয়া সংযোগ সেতু বাস্তবায়নে প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এর ভূমিকা ছিলো । বেলা ১২টায় মতলবের ঝুলন্ত সেতুর অনুমোদিত হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে মতলবের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। মতবের যে স্থানে ব্রিজ হবে কালিপুর নামক স্থানে তাৎক্ষণিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরিকল্পনার প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমের জন্য দোয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও উপজেলার ছেংগারচর, সুজাতপুর বাজার, আমিরাবাদ বাজার, জনতা বাজার, কালির বাজার, একলাশপুর বাজার, মোহনপুর বাজার সহ বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণের খবর পাওয়া যায়।
মতলব উত্তর উপজেলায় ব্রিজ সংলগ্ন কালিপুর বাজারে মেঘনা ধনাগোদা শেচ প্রকল্প পানি ফেডারশনের সভাপতি শাহীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খসরু ঢালীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখছেন ছেংগারচর পৌরসভার মেয়র আলহাজ্ব লায়ন আরিফুল্লাহ সরকার, মতলব উত্তর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক কবির হোসেন মাস্টার,ছেংগারচর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসান কাইয়ুম চৌধুরী,সমাজসেবক ও রাজনীতিবিদ খোকন চৌধুরী, ষাটনল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ভুলন চৌধুরী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আখতারুজ্জামান, উপজেলা যুবলীগ নেতা শরিফ হোসেন,ইসলামাবাদ ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জালাল ভূঁইয়া, ফতেপুর পূর্ব ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আবুল হাসনাত, ছেংগারচর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি রাজিব মিয়া।
পরে বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরিকল্পনার প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে কালিপুর এলাকার বিভিন্ন স্তরের লোকজন আনন্দ মিছিল বের করে। মিছিলের পর উপস্থিত জনতা ও এই এলাকা দিয়ে ট্রলারে নদী পারাপার হওয়া সকল পথচারীর মাঝে মিষ্টি বিতরন করা হয়।
সেতুর দৈর্ঘ্য ১.৮৫ কিলোমিটার। সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ৭.৫১ কিলোমিটার (গজারিয়া অংশে ৫.৪৬০ কিলোমিটার ও মতলব উত্তর অংশে ২.০৫৫ কিলোমিটার)। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক N1 এর সাথে ইন্টারচেঞ্জ ডেভেলপমেন্ট ২.১ কিলোমিটার। নদী শাসন কাজের দৈর্ঘ্য ২.২ কিলোমিটার। টোল প্লাজা একটি এবং ওজন স্টেশন হবে দুইটি। ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স হবে ২৫ মিটার। এই সেতু বাস্তবায়ন হলে জিডিপি প্রবৃদ্বির হার বাড়বে ০.২৩%।
গজারিয়া-মতলব সেতুটি ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে। এ সেতু নির্মাণের ফলে চাঁদপুর, লক্ষীপুর, নোয়াখালী এবং ভোলা জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে যাতায়াতের দূরত্ব সময় এবং ব্যয় হ্রাস পাবে।সেতুটি ব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (N-1) এর উপর যানবাহনের চাপ কমবে। সেই সাথে চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত মতলব উত্তর ও হাইমচর উপজেলায় অনুমোদিত দুইটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে পণ্য পরিবহন সহজ হবে।
এই সেতু দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে অবদান রাখবে। নদীর অববাহিকায় নতুন শিল্পাঞ্চল সহ পর্যটন শিল্প বিকাশের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। যা অত্র অঞ্চলের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। সেতুটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের প্রায় ১.৮ কোটি জনগণ প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা প্রাপ্ত হবে।
সেতুটির মধ্যে নদীর মূল প্রবাহে কোন পিলার থাকবে না। এজন্য নদীর প্রবাহে কোন বাধা সৃষ্টি হবে না।সেতু নির্মাণে ই ডি সি এফ (ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড) কোরিয়া এক্সিম ব্যাংক সহজ শর্তে (০.০১%-০.০৫%) হারে ঋণ দিবে ৩,৫১৩ কোটি ৯৫ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা এবং GOB হতে ঋণের পরিমাণ ৬৬০ কোটি ৭২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। টাকা ফেরত প্রদানের ম্যাচিউরিটি পিরিয়ড ৪০ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ড ১৫ বছর।
উল্লেখ্য, মতলব-গজারিয়া সেতুটি ২ লেনের ও ৬শত কোটি টাকায় এলজিইডির মাধ্যমে নির্মান করার প্রস্তাব ছিল।পরে শরীয়তপুর, ভোলা, লক্ষ্মীপুরসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের লোকজন এই পথে যাতায়াতের গুরুত্ব অনুধাবন করে সেতু মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৪ লেন বিশিষ্ট ৪হাজার ১শ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম ঝুলন্ত সেতু একনেকে অনুমোদিত হয়।
চাঁদপুর-২ আসনের সংসদ-সদস্য নুরুল আমিন রুহুল জানান, ৫০ বছর ধরে মেঘনা-ধনাগোদা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের দাবি ছিল এলাকাবাসীর। এ সেতুটি নির্মাণ হলে এ অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যসহ উন্নয়নের এক মাইল ফলক উন্মোচিত হবে। ৪হাজার ১শ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম ঝুলন্ত সেতু একনেকে অনুমোদিন দেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট নুরুল আমিন রুহুল এমপি।কৃতজ্ঞতা জানান সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপির প্রতি।আরো কৃতজ্ঞতা জানান যারা গজারিয়া -মতলব ঝুলন্ত সেতু বাস্তবায়নে মেধা ও শ্রম দিয়েছেন।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, মতলব-গজারিয়া ভবেরচর সংযোগ সেতু হবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ তারের ঝুলন্ত একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু। সেতু নির্মাণ বাস্তবায়নের সর্বশেষ ধাপ হলো একনেক সভায় অনুমোদন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এ সেতুর অনুমোদন করায়।