মোঃ জামাল উদ্দিন,কোম্পানীগঞ্জ( সিলেট)
সিলেটে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারি দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। সিলেটের কয়েকটি উপজেলায় একমাত্র কর্মক্ষেত্র কোয়ারি বন্ধ থাকায় শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। কর্মহীন মানুষেরা কাজের সন্ধানে কাজ না পেয়ে পরিবার নিয়ে অসহায় জীবন যাপন করছেন।
সিলেটের(কোম্পানীগঞ্জ,গোয়াইনঘাট,জৈন্তাপুর,কানাইঘাট)উপজেলা গুলোতে যুগ যুগ ধরে লক্ষ লক্ষ দিনমজুর পাথর উত্তোলনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে কর্মসংস্থান হারিয়ে দিশেহারা কর্মহীন সেই শ্রমিকরা।
পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের পাশাপাশি ক্ষতির সম্মুখীন ব্যবসায়ীরা।পাথর পরিবহনে সম্পৃক্ত ট্রাক মালিক,ট্রাক্টর মালিক ও স্টোন ক্রাশার মালিকরা বেকারত্বের বোঝা নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ব্যাংক লোন নিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সামনে দাঁড়িয়ে।পাথর কোয়ারি বন্ধ থাকায় মানুষের জীবন জীবিকায় দুর্বিষহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
সিলেটের প্রত্যেক উপজেলায় ভাল নেই স্থানীয় বাজারের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা।প্রত্যেক বাজারে কেনাবেচায় প্রভাব পড়ায় লস দিতে দিতে দোকানপাট বন্দ করে দিয়েছেন অনেক ব্যবসায়ী।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে, ব্যাংক থেকে নেওয়া লোনের চাপ,পরিবার চালাতে হিমশিম,এরই মধ্যে করোনা প্রকোপ মোকাবিলা, মরার উপর খাড়ার ঘাঁ স্বরণকালের ভয়াবহ বন্যায় বিপর্যস্ত ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি।লোনের দেনা মেটাতে পরিবারের ভরণপোষণের জন্য লক্ষাধিক টাকার গাড়ি, কোয়ারি সরঞ্জাম হকার ভাংগারিতে অল্প টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।কেউ কেউ উপায় না পেয়ে জমিজমা বিক্রি করে প্রবাসে পাড়ি জমাচ্ছেন কিন্তু সেখানেও দালালদের খপ্পরে পরে সর্বস্বান্ত হয়ে খালি হাতে ফিরছেন কাজ না পেয়ে যার প্রভাব পড়ছে অসহায় প্রত্যেকটা পরিবারে।
এমতাবস্থায় দেশীয় খনিজ সম্পদ পাথর উত্তোলন বন্ধ রেখে বাহিরা দেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে পাথর, বর্তমান বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় দেশীয় খনিজ সম্পদ পাথর উত্তোলন চালু করলে এই সংকট মোকাবিলায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। দেশীয় পাথর উত্তোলন হলে আমদানি কমে ডলারের রিজার্ভের উপর চাপ কমবে যা অত্যন্ত দরকার বর্তমান সময়ে।
সিলেট জেলার সবকটি পাথর কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন সম্ভব হলে উত্তোলিত পাথর দেশের সর্ব প্রকার চাহিদা পূরণে সক্ষম হবে।
এদিকে গত ৩১ মে পাথর উত্তোলনের ফলে সৃষ্ট সমস্যা নিরসনে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পাথর কোয়ারি, পাথর উত্তোলন, খাস কালেকশন আদায় ও জব্দ করা পাথর উন্মুক্ত নিলামের বিষয়ে দায়ের করা মামলা সমূহ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এবং খনিজ সম্পদ উন্নয়ন ব্যুরোকে নির্দেশ দেওয়া হয়।
সভায় গেজেটভুক্ত পাথর কোয়ারি সমূহ আবার ইজারা দেওয়ার যোগ্য কি না তা যাচাই করার লক্ষ্যে জিওগ্রাফিক্যাল সার্ভে এবং সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সমূহের ১০ জন প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তারা মজুদ পাথরের পরিমাণ, উত্তোলনযোগ্য পাথরের পরিমাণ, উত্তোলনের সময়কাল, পাথর কোয়ারি এলাকার পরিবেশ, পর্যটন শিল্পের বিকাশ বিবেচনা করে পাথর কোয়ারি সমূহের হালনাগাদ করবেন। এ ছাড়াও খনি ও খনিজ সম্পদ আইন ১৯৯২ এবং খনি ও খনিজ সম্পদ বিধিমালা ২০১২ পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সংশোধনের প্রয়োজন হলে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করতেও বলা হয়েছে এই কমিটিকে। কিন্তু দুই মাস পরও ওই কমিটির কোনো প্রস্তাবনা বা সংশোধনী প্রস্তাব এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
বাংলাদেশ লেবার ফেডারেশন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সভাপতি আব্দুল আজিজ বলেন, লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের জীবিকা নির্বাহ,ব্যবসায়ীদের গাড়ি,স্টোন ক্রাশার, ব্যাংক লোন,শত শত বাজারের ব্যবসা বাণিজ্যের কথা চিন্তা করে হলেও। আমাদের একমাত্র আয় রোজগারের মাধ্যম পাথর কোয়ারি গুলো খুলে দেওয়ার বিনীত অনুরোধ রইলো। শ্রমিক,ব্যবসায়ীদের প্রাণের দাবি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মানবিক দিক বিবেচনা করে সিলেটের সকল পাথর কোয়ারি খোলে দিবেন।