ওমর ফারুক সাইম, কচুয়া॥
মালিক সমিতি ও কচুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানের মধ্যে দ্বন্ধ নিয়ে কচুয়া-ঢাকা সড়কে সুরমা সুপার পরিবহনের বাস চলাচল দুদিন যাবৎ বন্ধ রয়েছে। সুরমা বাস চলাচল বন্ধ থাকায় নিয়মিত যাতায়াত করা শত শত যাত্রীর দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। গত বুধবার সকাল ৫টা থেকে থেকে কচুয়া, শাহরাস্তির হোসেনপুর, হাজীগঞ্জ ও মতলবের কাশিমপুর হতে ঢাকাগামী এবং ঢাকা থেকে কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব ও হাজীগঞ্জগামী ৮৪টি সুরমা সুপার বাসের সবকটি চলাচল বন্ধ রয়েছে। প্রশাসনের কর্মকর্তারা দফায় দফায় বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলেও বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে সক্ষম হননি।
সুরমা বাস চলাচল বন্ধের বিষয়ে সুরমা বাস মালিক সমিতির সভাপতি সালাম সওদাগর, সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন মজুমদার ও সাংগঠনিক সম্পাদক সাদেক মুন্সি জানান, কচুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুব আলমের নির্দেশে কতিপয় নামধারী কিছু ব্যক্তি শ্রমিক পরিচয়ে ২৪ আগস্ট বুধবার কচুয়া কাউন্টার দখল করে নেয়। এসময় তারা কচুয়া ফায়ার সার্ভিস সংলগ্ন সুরমা কাউন্টারে এসে কেরানী শফিকুল ইসলামকে মারধর করে কাউন্টার থেকে তাড়িয়ে দিয়ে প্রতিটি বাস থেকে ২শত টাকা করে জিপির টাকা আদায় করে। তারা কচুয়ার বিশ^রোড এলাকায় আমাদের ৫টি গাড়ির ব্যাটারি ও চাবি নিয়ে গাড়িগুলো আটকে রাখে। এ ঘটনার প্রতিবাদে ৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে।
এ বিষয়ে কচুয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মাহবুব আলম জানান, এই পরিবহনে হাজীগঞ্জ থেকে আমার একটি বাস চলাচলের সুযোগ দিলেও নতুন আরেকটি বাস শাহরাস্তি বাস টার্মিনাল থেকে চলাচলের অনুমতি চাইলে সুরমা সুপার বাস মালিক সমিতি আমার সাথে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করে। কয়েক দিন পূর্বে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আমার বাস থেকে ব্যাটারি খুলে নিয়ে যায় এবং ভাংচুর করে। তাই আমার লোকজন জনসম্মূখে তাদের গাড়ির ব্যাটারি খুলে নেয়। তিনি আরো দাবী করেন, বাস শ্রমিক সংগঠনের জিপির নামে দৈনিক ১৭শ’২০টাকা উত্তোলণ করে সেই টাকা বাস শ্রমিক সংগঠনের গুটি কয়েকজন আত্মসাৎ করে। তাদের প্রতি সংগঠনের অধিকাংশ শ্রমিকরা ক্ষুদ্ধ। এ ক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা কেরানি শফিকুল ইসলামকে কাউন্টার থেকে সরিয়ে দিয়ে জিপির টাকা আদায় করছে।
বৃহস্পতিবার কচুয়া ফায়ার সার্ভিস বাস কাউন্টার ও রহিমানগর বাস যাত্রী চাউনিতে গেলে ঢাকা অভিমুখী প্রায় অর্ধশত যাত্রী অপেক্ষামান দেখা যায়। যাত্রী মহসিন আহমেদ, জিসান আহমেদ, মফিজুল ইসলাম, মো. রাছেল, তানিয়া আক্তার ও সুমাইয়া আক্তার জানান, গত দুই দিন যাবৎ সুরমা বাস বন্ধ থাকায় আমরা এখন বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে সিএনজি ও মাইক্রোবাস যোগে ঢাকায় যেতে হচ্ছে। রামগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা আল-আরাফাহ ও বিআরটিসি বাস ৪শত টাকা করে ভাড়া আদায় করছে। তাছাড়া আল-আরাফাহ কচুয়া থেকে যাত্রী নেওয়ার বিধান না থাকলেও বাস না থাকায় অতিরিক্ত ভাড়ায় যাত্রী নিচ্ছে তারা। বিআরটিসির কচুয়া থেকে মাত্র ৮জন যাত্রীর সিট বরাদ্দ রয়েছে। সুরমা সুপার এর ভাড়া ছিলো ২শ’ ৩০ টাকা।
এদিকে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে জরুরী প্রয়োজনে ঢাকা যেতে অনেক যাত্রীর হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিন্তু ঢাকা থেকে ফেরার পথেও ২-৩বার গাড়ি পরিবর্তন করে কচুয়া আসতে হচ্ছে। যাতে ব্যাগ ও বাচ্ছাদের নিয়ে আমরা ভোগান্তি পোহাচ্ছি। দ্রুত সমস্যাটির সমাধান করে সুরমা সুপার বাস সার্ভিসটি চালু হবে প্রশাসনের কাছে আমাদের প্রত্যাশা।
এদিকে সুরমা বাস বন্ধের সুযোগে মাইক্রো ও সিএনজি ড্রাইভাররা সুরমা কাউন্টারের সামনে থেকে অতিরিক্ত ভাড়ার বিনিময়ে ঢাকায় যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি মাইক্রোবাসে ১২ জন বসার সুযোগ থাকলেও সেখানে ১৪-১৫ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাচ্ছে চালকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাইক্রোবাস চালকরা জানান, কাউন্টার থেকে গাড়ি ছাড়ার সময় জিপির নামে ২শত টাকা দিতে বাধ্য হচ্ছি। তাছাড়া ঢাকা থেকে ফেরার পথে খালি গাড়ি নিয়ে ফিরছি। যাতে করে আমাদের যাত্রীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নিতে হচ্ছে।
এব্যাপারে কচুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইব্রাহীম খলিল জানান, জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে বাস চলাচল স্বাভাবিক করতে বৈঠকে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার জন্য বাস মালিক সমিতির নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এছাড়াও বাস চলাচলে পুলিশের পক্ষ থেকে সকল ধরনের নিরাপত্তা দেওয়ার আশ^াসও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের আহবানে এ পর্যন্তও তাদের পক্ষ থেকে সাড়া পাওয়া যায়নি। তারপরও বাস চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
এব্যাপারে কচুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হাসান জানান, যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সমস্যার সমাধান করে শীঘ্রই বাস চলাচলের ব্যবস্থা করার জন্য দ্বন্ধে জড়ানো ব্যক্তিদেরকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।