—বোরহান উদ্দিন ডালিম—
সাংবাদিকতা পেশায় আজ পূর্ণ হলো ২৬ বছর। এই দীর্ঘ পথচলায় অনেক চড়াই উৎরাই পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ২৭ তম বছরে পা দিলাম আজ। সালটা ১৯৯৮। ২৮ জুন। চাঁদপুর জেলা সদর থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক চাঁদপুর সংবাদ (বর্তমানে দৈনিক) পত্রিকার মাধ্যমেই ইতিহাসের এই দিনে সাংবাদিকতায় আমার হাতেখড়ি। তখন জেলা শহরে কোনো দৈনিক পত্রিকা ছিল না। মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাহবুব আলম লাভলু ভাইয়ের হাত ধরে এ পেশায় যুক্ত হই। একজন জনসাধারণের সাংবাদিক হিসেবে সাংবাদিকতা আমার কাছে মহান পেশা। কাজের শুরুতে লাভলু ভাইয়ের আন্তরিক সহযোগিতা কোনোদিন ভুলতে পারবো না। অনেক সময় সংবাদ লেখায় সহযোগিতা করতেন; যা আমাকে উৎসাহিত করতো।
তবে চাঁদপুর সংবাদ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক আবদুর রহমান ও বার্তা সম্পাদক শেখ মহিউদ্দিন রাসেল ভাইয়ের আন্তরিকতার কমতি ছিল না। আমি ভুলে শুদ্ধে এবং সাধু ও চলিত ভাষার সংমিশ্রণে নিউজ লিখে দিতাম। কিন্তু তারা দীর্ঘ সময় নিয়ে তা সংশোধন করে পত্রিকায় ছাপাতেন এবং আমাকে নানা উপদেশ ও পরামর্শ দিতেন।
সাংবাদিকতার শুরুতে বর্তমানে দৈনিক বাংলাদেশের আলো পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মফিজুর রহমান খান বাবু , কামরুজ্জামান হারুন , রাকিবুল হাসান সোহাগের সহযোগিতার কথাও চিরদিন মনে থাকবে।
আমি যখন সাংবাদিকতা শুরু করি তখন মতলব উত্তর উপজেলা সৃষ্টি হয়নি। তখন প্রস্তাবিত ছেংগারচর প্রেসক্লাব দিয়েই মতলব উত্তর উপজেলার গণমাধ্যম কর্মীদের সাংবাদিক সংগঠনের সূচনা হয়েছিলো। ২০০০ সালে মতলব উত্তর উপজেলা সৃষ্টির হয়। তখন মতলব উত্তর প্রেসক্লাব হিসেবে আমাদের সাংবাদিকদের একটি সংগঠনের গোড়াপত্তন হয়েছে। মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের সৃষ্টিলগ্নে যারা মতলব উত্তরে সাংবাদিকতা করতেন তারা হলেন- মাহবুব আলম লাভলু, প্রসেনজিৎ চন্দ্র বিমল, কামরুজ্জামান হারুন, শামসুজ্জামান ডলার, রাকিবুল হাসান সোহাগ, হুমায়ুন কবির, লুৎফর বারী বারেক, বোরহান উদ্দিন ডালিম (আমি নিজে), শহিদুল ইসলাম খোকন, জয়নাল আবেদীন, মিলন মাহমুদ, নাছির উদ্দীন নদী, নাসির উদ্দিন ( আমার বড় ভাই), ইসমত বাহার, সাইদুর রহমান শিবলু ও মাসুদুর রহমান তুহিন। এরাই হলো মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। তৎপরবর্তীকালে মতলব উত্তরে অনেকেই এই পেশায় সম্পৃক্ত হয়ে সাংবাদিক অঙ্গনকে সমৃদ্ধ করেছেন।
তৎকালীন সাপ্তাহিক চাঁদপুর সংবাদ পত্রিকার মাধ্যমে শুরুটা হলেও পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে জেলা শহরের দৈনিক চাঁদপুর দর্পন, চাঁদপুর প্রবাহ, চাঁদপুর খবর ও শপথ পত্রিকায় কাজের সুযোগ পেয়েছি। জাতীয় পত্রিকা দৈনিক বাংলাবাজার, দিনকাল, দিনের শেষে, আজকের কালের চিত্র, সংবাদ প্রতিদিন, বাংলাদেশের আলো ও সাপ্তাহিক পরিচয় পত্রিকায়ও কাজ করার সুযোগ হয়েছে। বর্তমানে ২০২১ সালের ৭ নভেম্বর থেকে দৈনিক প্রিয় চাঁদপুর পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশকের দায়িত্ব পালন করেছি আসছি।
দীর্ঘ পথ চলায় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে লুকিয়ে থাকা অনিয়ম দূর্নীতিসহ নানা অপরাধ সম্পর্কে দেশ-জাতি ও প্রশাসনের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। মতলব উত্তর উপজেলার সমস্যাসহ জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদন করেছি। একাধিক ক্রাইম নিউজ করা ও প্রতিবাদের কারণে বিভিন্ন মামলার আসামিও হতে হয়েছে।
আমি মনে করি, সময়ের সাথে সাথে সাংবাদিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও ক্রাইম নিউজের সংখ্যা কমছে। একজন একটা নিউজ করলে সেটাকে কাটছাট করে বা কপি পেস্ট করেই সাংবাদিকতা চালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে এ পেশায় ক্রাইম নিউজ না করার পিছনে প্রশাসন ও প্রভাবশালী মহলের সাথে সাংবাদিকদের গভীর সখ্যতাও একটি বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সাংবাদিকতা পেশায় যুক্ত হয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের নেতৃত্ব দেয়ার চেষ্টা করেছি। বর্তমানে মতলব উত্তর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও চাঁদপুর জেলা সাংবাদিক ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছি।
সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো এখন আর সাংবাদিককতায় পুরোপুরি সময় দিতে না পারলেও সাংবাদিকতা ছেড়ে দেইনি। জীবনের প্রথম পেশা সাংবাদিকতাকে কোন দিনই বিদায় জানানো সম্ভব নয়। এখনো সামান্য সময় পেলে লিখতে বসি। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখি। প্রকাশিত হয় পত্রিকার পাতায়। কাকতালীয়ভাবে আজকেই আমার জন্মদিন অর্থাৎ আজকের এই দিনে পৃথিবীর বুকে আমার আগমন ঘটেছিলো।
আমার সাংবাদিকতার এই ২৬ বছরে যে বা যারা বিভিন্ন ভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন আমি তাদের কাছে ঋণী। সকলের আন্তরিক সহযোগিতাই আমার আগামী দিনের পথ চলার প্রত্যয়। সবাই দোয়া করবেন যেন আরো অনেকটা সময় সাংবাদিকতার মাধ্যমে জনসাধারণ তথা দেশের জন্য কিছু করে যেতে পারি; সুন্দর পৃথিবী বিনির্মাণে আগামীর পথ যেন আরো সুগম হয়।
—বোরহান উদ্দিন ডালিম
সম্পাদক ও প্রকাশক
দৈনিক প্রিয় চাঁদপুর।
তারিখ: ২৮ জুন, ২০২৪